প্রশ্নঃ পাহাড়পুরের ‘সোমপুর মহাবিহার’ বাংলার কোন শাসন আমলের স্থাপত্য কীর্তির নিদর্শন?
[ বিসিএস ৪৬তম ]
নওগা জেলার পাহাড়পুরে অবস্থিত সোমপুর মহাবিহার প্রাচীন বাংলার ❝পাল রাজবংশের❞ শাসনামলে অষ্টম শতকের শেষের দিকে বা নবম শতকের শুরুর দিকে স্থাপিত হয়।
প্রশ্নঃ ‘বার বিধি’ (The Twelve Tables) কী?
[ বিসিএস ৪৬তম ]
‘বার বিধি’ (The Twelve Tables) ছিল প্রাচীন রোমান আইনের ভিত্তিস্তম্ভ। এটি ৪৫০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে ব্রোঞ্জের বারোটি স্তম্ভে খোদাই করে রোমান ফোরামে জনসমক্ষে স্থাপন করা হয়েছিল।
‘বার বিধি’ প্রণয়নের মূল উদ্দেশ্য ছিল:
- আইনের একত্রীকরণ ও সুস্পষ্টকরণ: এর আগে রোমান আইন মূলত ঐতিহ্য ও প্রথার উপর নির্ভরশীল ছিল এবং এর প্রয়োগে যথেষ্ট অস্পষ্টতা ও পক্ষপাতিত্বের সুযোগ ছিল। ‘বার বিধি’ আইনগুলোকে একটি সুনির্দিষ্ট কাঠামোয় নিয়ে আসে।
- সাধারণ মানুষের অধিকার রক্ষা: প্লেবিয়ান (সাধারণ নাগরিক) শ্রেণী প্যাট্রিশিয়ানদের (অভিজাত শ্রেণী) স্বেচ্ছাচারী আইন প্রয়োগের বিরুদ্ধে দীর্ঘকাল ধরে সংগ্রাম করছিল। ‘বার বিধি’ প্রণয়নের মাধ্যমে আইনের একটি লিখিত রূপ দেওয়া হয়, যা সকলের জন্য সমানভাবে প্রযোজ্য হওয়ার একটি ভিত্তি তৈরি করে।
- আইনের জ্ঞান সকলের কাছে সহজলভ্য করা: জনসমক্ষে স্থাপন করার ফলে সাধারণ মানুষও আইন সম্পর্কে জানতে পারত এবং নিজেদের অধিকার সম্পর্কে সচেতন হতে পারত।
প্রশ্নঃ ভারত কর্তৃক সিকিম সংযুক্ত হয়—
[ বিসিএস ৪৫তম ]
১৯৭৫ সালে ভারত কর্তৃক সিকিম সংযুক্ত হয়।
ঘটনাটি কয়েকটি ধাপে ঘটেছিল:
- ১৯৫০: ভারত ও সিকিমের মধ্যে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়, যার মাধ্যমে সিকিম ভারতের আশ্রিত রাজ্যে পরিণত হয়। ভারত সিকিমের প্রতিরক্ষা, বৈদেশিক সম্পর্ক ও যোগাযোগের দায়িত্ব নেয়।
- ১৯৭৩: সিকিমে রাজতন্ত্রের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ দেখা দেয়।
- ১৯৭৪: ভারতের হস্তক্ষেপে একটি নতুন সংবিধান প্রণয়ন করা হয় এবং চোগিয়ালের ক্ষমতা হ্রাস করা হয়।
- ১৯৭৫: সিকিমের প্রধানমন্ত্রী লেংদুপ দর্জির অনুরোধে ভারতীয় সেনাবাহিনী সিকিমের নিয়ন্ত্রণ নেয়। এরপর একটি গণভোট অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে সিকিমের জনগণ ভারতের সাথে যোগদানের পক্ষে বিপুলভাবে রায় দেয়।
- ১৯৭৫ সালের ১৬ মে: সিকিম আনুষ্ঠানিকভাবে ভারতের ২২তম রাজ্য হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হয়।
প্রশ্নঃ কোন দেশ থেকে ‘আরব বসন্ত’-এর সূচনা হয়?
[ বিসিএস ৪৪তম ]
সঠিক উত্তর হল তিউনিসিয়া।
২০১০ সালের ডিসেম্বরে তিউনিসিয়ার এক ফল বিক্রেতা Mohamed Bouazizi-র আত্মাহুতির মাধ্যমে আরব বসন্তের সূচনা হয়। এরপর এই আন্দোলন দ্রুত অন্যান্য আরব দেশগুলোতে ছড়িয়ে পড়ে।
প্রশ্নঃ কোন সালে রাশিয়া ক্রিমিয়া দখল করে?
[ বিসিএস ৪৪তম ]
২০১৪ সালে রাশিয়া ক্রিমিয়া দখল করে।
ইউক্রেনের এই উপদ্বীপটি ২০১৪ সালের ফেব্রুয়ারী ও মার্চ মাসে রুশপন্থী বিচ্ছিন্নতাবাদী এবং রুশ সৈন্যদের দ্বারা দখলের শিকার হয়। পরবর্তীতে, বিতর্কিত একটি গণভোটের মাধ্যমে রাশিয়া আনুষ্ঠানিকভাবে ক্রিমিয়াকে তার অংশ হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করে নেয়, যদিও ইউক্রেন এবং বিশ্বের বেশিরভাগ দেশ এই অন্তর্ভুক্তিকে অবৈধ হিসেবে গণ্য করে।
আধুনিক মেধাভিত্তিক সিভিল সার্ভিস এর উন্মেষ ঘটে প্রাচীন চীন সম্রাজ্যে। তাঁরাই প্রথম পরীক্ষার মাধ্যমে যোগ্য প্রার্থীকে বেছে নেয়ার পদ্ধতি চালু করে। সুই সাম্রাজ্য (৫৮১ থেকে ৬১৮) মেধার ভিত্তিতে আমলাদের নির্বাচিত করার পদ্ধতি চালু করে।
প্রশ্নঃ প্রাকৃতিক আইনের উদ্ভব হয়:
[ বিসিএস ৩৮তম ]
ব্রিটিশ দার্শনিক ও রাষ্ট্র চিন্তাবিদ টমাস হবস ও জন লক এবং ডাচ আইনজ্ঞ হুগো গ্রোসিয়াসের লেখা থেকে প্রাকৃতিক আইনের উদ্ভব হয়। ১২১৫ খ্রিস্টাব্দে ইংল্যান্ডের রাজা জন কর্তৃক ঘোষিত জনগণের জন্য রাজনৈতিক ও ব্যক্তি স্বাধীনতা সংক্রান্ত সনদ হলো ম্যাগনাকার্টা। গ্রিক, খ্রিস্টান ও মধ্যযুগীয় ধর্মতত্ত্ব ছিল প্যাপাসি বা পোপতান্ত্রিক। খ্রিস্টপূর্ব পঞ্চম শতকের চীনা দার্শনিক কনফুসিয়াসের সৃষ্ট কুনফুসিয়াসবাদের মূল শিক্ষাই ছিল সুবিধাভোগী শ্রেণির আধিপত্য কায়েম করা এবং ঈশ্বরের ইচ্ছার জয়গান করা।
প্রশ্নঃ ‘Black Lives Matter’ কি?
[ বিসিএস ৩৭তম ]
'ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার' (Black Lives Matter - BLM) হলো একটি আন্তর্জাতিক বিকেন্দ্রীভূত রাজনৈতিক ও সামাজিক আন্দোলন। এর প্রধান উদ্দেশ্য হলো কৃষ্ণাঙ্গ জনগোষ্ঠীর প্রতি বর্ণবাদ, বৈষম্য এবং পুলিশি বর্বরতার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করা এবং ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করা।
উদ্ভব ও বিস্তার:
- ২০১৩ সালে আমেরিকায় এই আন্দোলনের সূত্রপাত হয় ট্রেভন মার্টিনের হত্যাকারী জর্জ জিমারম্যানের খালাসের প্রতিবাদে। অ্যালিসিয়া গার্জা, প্যাট্রিস কুলর্স এবং ওপাল টোমেটি '#BlackLivesMatter' হ্যাশট্যাগ ব্যবহারের মাধ্যমে অনলাইনে এই আন্দোলন শুরু করেন।
- ২০১৪ সালে মাইকেল ব্রাউন ও এরিক গার্নারসহ নিরস্ত্র কৃষ্ণাঙ্গদের পুলিশি হত্যাকাণ্ডের পর আন্দোলনটি দেশজুড়ে ব্যাপকতা লাভ করে।
- বিশেষ করে ২০২০ সালে জর্জ ফ্লয়েডের পুলিশি হেফাজতে মৃত্যুর ঘটনা বিশ্বজুড়ে ব্যাপক বিক্ষোভের জন্ম দেয় এবং 'ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার' আন্দোলন আন্তর্জাতিক মনোযোগ আকর্ষণ করে।
উদ্দেশ্য ও দাবি:
- পুলিশি বর্বরতা ও পদ্ধতিগত বর্ণবাদ নির্মূল: আন্দোলনের মূল লক্ষ্য হলো কৃষ্ণাঙ্গদের প্রতি পুলিশি সহিংসতা, জাতিগত প্রোফাইলিং এবং যুক্তরাষ্ট্রের ফৌজদারি বিচার ব্যবস্থায় বিদ্যমান পদ্ধতিগত বর্ণবাদ বন্ধ করা।
- কৃষ্ণাঙ্গ জীবনের মূল্য প্রতিষ্ঠা: এটি জোর দিয়ে বলে যে, কৃষ্ণাঙ্গদের জীবনও মূল্যবান এবং সাদা মানুষদের জীবনের মতোই তাদের মর্যাদা ও সম্মান প্রাপ্য।
- সামাজিক ন্যায়বিচার: এটি কেবল পুলিশি সংস্কার নয়, বরং কৃষ্ণাঙ্গ সম্প্রদায়ের প্রতি বৈষম্যমূলক নীতি, অর্থনৈতিক অসমতা এবং অন্যান্য সামাজিক অবিচারের বিরুদ্ধেও কাজ করে।
- আইন ও নীতির পরিবর্তন: আন্দোলনকারীরা পুলিশি জবাবদিহিতা বাড়ানো, পুলিশি বাজেট হ্রাস করে সামাজিক সেবায় বিনিয়োগ, এবং অন্যান্য কাঠামোগত সংস্কারের দাবি জানায়।
বৈশিষ্ট্য:
- বিকেন্দ্রীভূত আন্দোলন: 'ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার' একটি কেন্দ্রীয় নেতৃত্ববিহীন তৃণমূল পর্যায়ের আন্দোলন। এর স্থানীয় শাখাগুলো স্বায়ত্তশাসিতভাবে কাজ করে।
- অহিংস প্রতিরোধ: আন্দোলনকারীরা সাধারণত অহিংস প্রতিবাদ, বিক্ষোভ, এবং জনসচেতনতা বৃদ্ধির মাধ্যমে তাদের দাবি তুলে ধরে।
- বহুমাত্রিকতা: এই আন্দোলনটি শুধু জাতিগত ন্যায়বিচারের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং LGBTQ+ অধিকার, নারীবাদ, অভিবাসন সংস্কার এবং অর্থনৈতিক ন্যায়বিচারের মতো বিষয়গুলোকেও সমর্থন করে।
সংক্ষেপে, 'ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার' হলো কৃষ্ণাঙ্গ জনগোষ্ঠীর প্রতি চলমান বর্ণবাদ ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে একটি শক্তিশালী বৈশ্বিক কণ্ঠস্বর, যা সমতা, ন্যায়বিচার এবং মানবিক মর্যাদার দাবি জানায়।
প্রশ্নঃ লাওসের (Laos) সরকারি নাম কি?
[ বিসিএস ৩৬তম ]
লাওসের সরকারি নাম হলো লাও গণপ্রজাতন্ত্রী গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র।
লাও ভাষায় এর উচ্চারণ: সাত্থালানালত পাছাত্থিপাতাই পাছাখন লাও (Sathalanalat Paxathipatai Paxaxôn Lao)।
ইংরেজিতে এটিকে Lao People's Democratic Republic (LPDR) বলা হয়।
প্রশ্নঃ ‘আরব বসন্ত’ বলতে কি বুঝায়?
[ বিসিএস ৩৪তম ]
'আরব বসন্ত' (Arab Spring) বলতে মূলত ২০১০ সালের শেষ দিক থেকে শুরু হয়ে মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকার কয়েকটি আরব দেশে ছড়িয়ে পড়া গণবিক্ষোভ, অভ্যুত্থান এবং সরকারবিরোধী আন্দোলনকে বোঝায়। পশ্চিমা গণমাধ্যম এই আন্দোলনগুলোকে 'আরব বসন্ত' নামে অভিহিত করে।
সূচনা ও বিস্তার: আরব বসন্তের সূচনা হয় ২০১০ সালের ১৭ ডিসেম্বর তিউনিসিয়ায়। মোহাম্মদ বুয়াজ্জিজি নামের এক ফল বিক্রেতার আত্মাহুতির ঘটনাকে কেন্দ্র করে তিউনিসিয়ায় ব্যাপক বিক্ষোভ শুরু হয়, যা ২৩ বছরের স্বৈরশাসক জাইনুল আবেদিন বেন আলীর পতন ঘটায়। তিউনিসিয়ার এই সাফল্য অন্যান্য আরব দেশের জনগণকে উৎসাহিত করে এবং আন্দোলন দ্রুত মিশর, লিবিয়া, ইয়েমেন, সিরিয়া ও বাহরাইনসহ অন্যান্য দেশে ছড়িয়ে পড়ে।
আন্দোলনের মূল কারণসমূহ: এই গণবিক্ষোভের পেছনে বেশ কিছু সাধারণ কারণ ছিল:
- দীর্ঘদিনের স্বৈরশাসন ও রাজতন্ত্র: বেশিরভাগ আরব দেশে বহু দশক ধরে অগণতান্ত্রিক ও স্বৈরশাসকদের শাসন চলছিল।
- দুর্নীতি: সরকারি উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের ব্যাপক দুর্নীতি।
- দুর্বল অর্থনীতি ও উচ্চ বেকারত্ব: অর্থনৈতিক মন্দা, উচ্চ বেকারত্বের হার, বিশেষ করে শিক্ষিত তরুণদের মধ্যে।
- দারিদ্র্য ও দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি: সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রার মান হ্রাস এবং নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের উচ্চমূল্য।
- মানবাধিকার লঙ্ঘন: মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, সমাবেশের অধিকারসহ মৌলিক মানবাধিকারের ব্যাপক লঙ্ঘন।
- রাজনৈতিক স্বাধীনতার অভাব: জনগণের রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণের সুযোগের অভাব।
ফলাফল: আরব বসন্তের ফলে কিছু দেশে দীর্ঘদিনের স্বৈরশাসকদের পতন ঘটে:
- তিউনিসিয়া: প্রেসিডেন্ট জাইনুল আবেদিন বেন আলীর পতন।
- মিশর: প্রেসিডেন্ট হোসনি মোবারকের পতন।
- লিবিয়া: মুয়াম্মার গাদ্দাফির পতন ও মৃত্যু।
- ইয়েমেন: প্রেসিডেন্ট আলী আবদুল্লাহ সালেহর পদত্যাগ।
তবে, আরব বসন্তের ফলাফল মিশ্র ছিল। কিছু দেশে (যেমন তিউনিসিয়া) তুলনামূলকভাবে শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা পরিবর্তন হলেও, অন্যান্য দেশে (যেমন লিবিয়া, সিরিয়া, ইয়েমেন) এটি ভয়াবহ গৃহযুদ্ধ, অস্থিতিশীলতা, চরমপন্থা ও মানবিক সংকটের জন্ম দিয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে, গণতন্ত্রের স্বপ্ন পূরণ হয়নি এবং নতুন করে সংঘাত ও বিশৃঙ্খলা তৈরি হয়েছে। সিরিয়ার গৃহযুদ্ধ এর সবচেয়ে ভয়াবহ উদাহরণ।
সুতরাং, 'আরব বসন্ত' ছিল আরব বিশ্বের জনগণের একটি স্বতঃস্ফূর্ত বিদ্রোহ, যা স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে গণতন্ত্র ও স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষা থেকে উৎসারিত হয়েছিল, কিন্তু এর পরিণতি সবক্ষেত্রে আশানুরূপ ছিল না।
প্রশ্নঃ কবে ফরাসি বিপ্লব সংঘটিত হয?
[ বিসিএস ৩১তম ]
১৭৭৮ থেকে ১৭৮৯ সাল পর্যন্ত ফ্রান্সের নানা উত্তাল ঘটনাধারা ‘ফরাসি বিপ্লব’ নামে ইতিহাস প্রসিদ্ধ হয়ে আছে। ১৭৮৯ সালের ১৪ জুলাই বাস্তিল দুর্গ আক্রমণ ও দখলের মাধ্যমে জনগণের বিপ্লবী অভ্যুত্থান জয়যুক্ত হয় এবং আজও এই তারিখটি বিশ্বব্যাপী ফরাসি বিপ্লবের দিন হিসেবে পালিত হয়।
প্রশ্নঃ সতীদাহ প্রথা কবে রহিত হয়?
[ বিসিএস ২২তম ]
সতীদাহ প্রথা হলো সহমরণ বিষয়ক সনাতন ধর্মাবলম্বীদের এক বিশেষ প্রথা। স্বামীর মৃত্যু হলে স্বামীর চিতায় স্ত্রীকে জীবন্ত দাহ করা হতো। রাজা রামমোহন রায়ের অক্লান্ত পরিশ্রমের ফলে ১৮২৯ সালে লর্ড উইলিয়াম বেন্টিঙ্ক ‘সতীদাহ প্রথা’ রহিত করেন।
প্রশ্নঃ ফরাসি বিপ্লবকে অনুপ্রাণিত করেন নিম্নের কোন লেখকদ্বয়?
[ প্রা.বি.স.শি. 29-03-2024 ]
ফরাসি বিপ্লবের প্রেক্ষাপট তৈরিতে রুশো (Jean-Jacques Rousseau) এবং ভলতেয়ার (Voltaire) ছিলেন দুজন অত্যন্ত প্রভাবশালী দার্শনিক। তাদের চিন্তাধারা ফরাসি সমাজের বিদ্যমান রীতিনীতি, রাজনৈতিক ব্যবস্থা এবং সামাজিক বৈষম্যের বিরুদ্ধে জনমত গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল।
রুশোর অবদান:
- সামাজিক চুক্তি (Social Contract): রুশোর এই বিখ্যাত গ্রন্থটিতে তিনি জনগণের সার্বভৌমত্বের ধারণা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, রাষ্ট্রের ভিত্তি হলো জনগণের মধ্যে একটি সামাজিক চুক্তি, যেখানে জনগণ তাদের কিছু স্বাধীনতা সরকারের হাতে ন্যস্ত করে, কিন্তু চূড়ান্ত ক্ষমতা জনগণের কাছেই থাকে। যদি সরকার জনগণের ইচ্ছার বিরুদ্ধে কাজ করে, তবে জনগণের সেই সরকারকে পরিবর্তন করার অধিকার আছে। এই ধারণা ফরাসি বিপ্লবীদের রাজতন্ত্রের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করতে অনুপ্রাণিত করেছিল।
- প্রকৃতির রাজ্যে মানুষ: রুশো বিশ্বাস করতেন মানুষ জন্মগতভাবে স্বাধীন এবং সৎ। সমাজের দুর্নীতি ও বৈষম্য মানুষকে অসৎ করে তোলে। এই ধারণা তৎকালীন অভিজাত শ্রেণির সুযোগ-সুবিধা এবং সাধারণ মানুষের দুর্দশার সমালোচনা করার একটি দার্শনিক ভিত্তি তৈরি করে।
- অসাম্যের উৎস: রুশোর 'Discourse on the Origin of Inequality' গ্রন্থে তিনি ব্যক্তিগত সম্পত্তির ধারণাকে অসাম্যের মূল কারণ হিসেবে চিহ্নিত করেন। এই ধারণা ফরাসি সমাজের শ্রেণী বৈষম্য এবং সম্পদের অসম বণ্টনের বিরুদ্ধে বিপ্লবী চেতনা জাগাতে সাহায্য করে।
- সাধারণ ইচ্ছা (General Will): রুশোর 'সাধারণ ইচ্ছা'র ধারণা অনুযায়ী, রাষ্ট্রের লক্ষ্য হওয়া উচিত জনগণের সামগ্রিক কল্যাণ। কোনো বিশেষ গোষ্ঠী বা ব্যক্তির স্বার্থের ঊর্ধ্বে উঠে রাষ্ট্র পরিচালিত হবে জনগণের সম্মিলিত ইচ্ছায়। এই ধারণা বিপ্লবীদের একটি নতুন রাজনৈতিক আদর্শের সন্ধান দিয়েছিল।
ভলতেয়ারের অবদান:
- বাকস্বাধীনতা ও ধর্মীয় সহিষ্ণুতা: ভলতেয়ার ছিলেন বাকস্বাধীনতার একজন বলিষ্ঠ প্রবক্তা এবং ধর্মীয় গোঁড়ামির তীব্র সমালোচক। তিনি ক্যাথলিক চার্চের দুর্নীতি, অযৌক্তিকতা এবং সমাজের উপর তার প্রভাবের বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলেন। তার বিখ্যাত উক্তি "আমি তোমার মতের সঙ্গে একমত নাও হতে পারি, কিন্তু তোমার মত প্রকাশের অধিকার রক্ষায় আমি জীবন দিতে পারি" - বাকস্বাধীনতার গুরুত্বকে তুলে ধরে।
- স্বৈরাচারী শাসনের সমালোচনা: ভলতেয়ার রাজতন্ত্রের স্বৈরাচারী শাসনের কঠোর সমালোচনা করেন। তিনি আইনের শাসন এবং একটি নিরপেক্ষ বিচার ব্যবস্থার পক্ষে ছিলেন। তার লেখাগুলি সাধারণ মানুষকে রাজার ক্ষমতার অপব্যবহার সম্পর্কে সচেতন করে তোলে।
- যুক্তিবাদ ও জ্ঞানের প্রচার: ভলতেয়ার ছিলেন আলোকিত যুগের একজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব। তিনি যুক্তি, বিজ্ঞান এবং জ্ঞানের উপর গুরুত্ব আরোপ করেন এবং কুসংস্কার ও অন্ধবিশ্বাসের বিরুদ্ধে লড়াই করেন। তার এই চিন্তাধারা ফরাসি সমাজে প্রগতিশীল ও সমালোচনামূলক মানসিকতা বিকাশে সাহায্য করে।
- সাহিত্য ও নাটকের মাধ্যমে বার্তা: ভলতেয়ার তার বিভিন্ন সাহিত্যকর্ম, নাটক ও প্রবন্ধের মাধ্যমে বিপ্লবী বার্তা ছড়িয়ে দেন। তার ব্যঙ্গাত্মক ও তীক্ষ্ণ লেখনী সমাজের অসঙ্গতি ও অন্যায়গুলোকে জনগণের সামনে তুলে ধরে এবং তাদের মধ্যে ক্ষোভের সঞ্চার করে।
সংক্ষেপে, রুশো ও ভলতেয়ার তাদের দার্শনিক চিন্তাধারা এবং লেখনীর মাধ্যমে ফরাসি বিপ্লবের আদর্শিক ভিত্তি স্থাপন করেছিলেন। রুশোর জনগণের সার্বভৌমত্ব ও সামাজিক চুক্তির ধারণা এবং ভলতেয়ারের বাকস্বাধীনতা ও স্বৈরাচারী শাসনের সমালোচনার মতো ধারণাগুলো বিপ্লবীদের নতুন পথের দিশা দেখিয়েছিল এবং সাধারণ মানুষকে তাদের অধিকার আদায়ে অনুপ্রাণিত করেছিল। তাদের অবদান ফরাসি বিপ্লবের গতিপথ নির্ধারণে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছিল।