প্রশ্নঃ চর্যাপদের কবিরা ছিলেন –
[ বিসিএস ৪৬তম ]
চর্যাপদের কবিরা মূলত বৌদ্ধ ধর্মের সহজিয়া সম্প্রদায়ের অনুসারী ছিলেন। তারা তন্ত্র সাধনার মাধ্যমে আত্মদর্শনের পথ অনুসরণ করতেন এবং তাদের কবিতায় আধ্যাত্মিক চিন্তাধারার সঙ্গে সঙ্গে সমাজের বাস্তবতাও প্রতিফলিত হয়েছে।
আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য:
চর্যাপদ বাংলা সাহিত্যের প্রাচীনতম নিদর্শন।
এর কবিতাগুলোকে বলা হয় "চর্যা", আর কবিদের বলা হয় "চর্যাগীতি রচয়িতা"।
কবিদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন: লুইপা, সরহপা, কুক্কুরিপা, ভুসুকুপা প্রমুখ।
আপনি কি এই প্রশ্নটি একটি মডেল টেস্টে ব্যবহার করতে চাচ্ছেন?
প্রশ্নঃ চর্যাপদের তিব্বতি অনুবাদ প্রকাশ করেন কে?
[ বিসিএস ৪৫তম ]
চর্যাপদের তিব্বতি অনুবাদ প্রবোধচন্দ্র বাগচী সংগ্রহ করেন।
তিনি ১৯৩৮ সালে আই. পি. কডিয়ার কর্তৃক প্রকাশিত তেঙ্গুর পুস্তক তালিকায় এই বইটির পূর্ণাঙ্গ তিব্বতি অনুবাদের সন্ধান পান। এই আবিষ্কার চর্যাপদের মূল পাঠ এবং এর টীকা সম্পর্কে নতুন তথ্য উন্মোচন করতে সহায়ক হয়েছিল।
প্রশ্নঃ বিদ্যাপতি মূলত কোন ভাষার কবি ছিলেন?
[ বিসিএস ৪৪তম ]
বিদ্যাপতি মূলত মৈথিলী ভাষার কবি ছিলেন।
তিনি পঞ্চদশ শতাব্দীর মৈথিলী কবি ছিলেন এবং মিথিলার (বর্তমান বিহার ও নেপালের অংশ) রাজসভায় সম্মানিত ছিলেন। মৈথিলী ছাড়াও তিনি সংস্কৃত ও অবহট্ট ভাষায় কিছু রচনা করেছিলেন।
তবে, বাংলা অঞ্চলে বিদ্যাপতির যে পদাবলী প্রচলিত, তার ভাষা ব্রজবুলি। ব্রজবুলি হলো মৈথিলী ও বাংলার মিশ্রণে সৃষ্ট একটি কৃত্রিম সাহিত্যিক ভাষা। শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু এবং পরবর্তী বৈষ্ণব পদকর্তারা এই ভাষায় রাধাকৃষ্ণের প্রেমলীলা বিষয়ক পদ রচনা করেছেন। এই কারণে বিদ্যাপতি বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ স্থান অধিকার করে আছেন।
প্রশ্নঃ চর্যাপদের প্রাপ্তিস্থান কোথায়?
[ বিসিএস ৪৩তম ]
১৯০৭ সালে মহামহোপাধ্যায় হরপ্রসাদ শাস্ত্রী নেপালের রাজদরবারের গ্রন্থাগার থেকে চর্যাপদের পুঁথি আবিষ্কার করেন। পুঁথিটির নাম ছিল "চর্যাচর্যবিনিশ্চয়"।
প্রশ্নঃ আর্যদের ধর্মগ্রন্থের নাম কী ছিল?
[ বিসিএস ৪৩তম ]
সঠিক উত্তর হল ঘঃ বেদ।
বেদ ছিল আর্যদের প্রধান ধর্মগ্রন্থ। চারটি বেদ রয়েছে - ঋগবেদ, সামবেদ, যজুর্বেদ এবং অথর্ববেদ। এই গ্রন্থগুলোতে তাদের ধর্মীয় বিশ্বাস, আচার-অনুষ্ঠান, স্তোত্র এবং দার্শনিক চিন্তাভাবনা লিপিবদ্ধ আছে। মহাভারত, রামায়ণ ও গীতা - এই তিনটি গ্রন্থও হিন্দু ধর্মের গুরুত্বপূর্ণ অংশ, তবে এগুলো বেদের পরবর্তী সময়ের রচনা।
প্রশ্নঃ কোন সাহিত্যকর্মে সান্ধ্য ভাষার প্রয়োগ আছে?
[ বিসিএস ৪২তম ]
সঠিক উত্তর হলো গঃ চর্যাপদ।
চর্যাপদে সান্ধ্য ভাষার প্রয়োগ দেখা যায়। সান্ধ্য ভাষা হলো এক ধরনের রহস্যময় ভাষাশৈলী, যেখানে বাহ্যিক অর্থে এক রকম এবং গভীর অর্থে অন্য রকম ভাব প্রকাশিত হয়। চর্যাপদের বৌদ্ধ সহজিয়া সাধকদের তত্ত্ব ও দর্শন এই সান্ধ্য ভাষার মাধ্যমে প্রকাশ করা হয়েছে বলে মনে করা হয়।
অন্যান্য বিকল্পগুলো:
- পদাবলী: বৈষ্ণব পদাবলীতে রাধাকৃষ্ণের প্রেমলীলা ও ভক্তিবাদ সরল ও স্বাভাবিক ভাষায় প্রকাশ পেয়েছে।
- গীতগোবিন্দ: জয়দেবের এই সংস্কৃত কাব্যেও সরাসরি ও স্পষ্ট ভাষায় রাধাকৃষ্ণের প্রেম বর্ণিত হয়েছে।
- চৈতন্যজীবনী: চৈতন্যদেবের জীবন ও দর্শন নিয়ে রচিত এই গ্রন্থগুলোতে তৎকালীন লোকভাষা ও সাহিত্যিক ভাষার মিশ্রণ দেখা যায়, তবে সান্ধ্য ভাষার বৈশিষ্ট্য সেখানে অনুপস্থিত।
প্রশ্নঃ চর্যাপদে কোন ধর্মমতের কথা আছে?
[ বিসিএস ৪০তম ]
চর্যাপদে মূলত বৌদ্ধ সহজিয়া ধর্মমতের কথা আছে।
চর্যাপদের পদকর্তারা ছিলেন সহজিয়া বৌদ্ধ সিদ্ধাচার্য। এই গানেগুলির মাধ্যমে তাঁরা বৌদ্ধ ধর্মের গূঢ় সাধনপ্রণালী এবং দার্শনিক তত্ত্ব রূপকের আশ্রয়ে প্রকাশ করেছেন। সহজিয়া বৌদ্ধধর্ম, বৌদ্ধ ধর্মেরই একটি শাখা যা আচার-অনুষ্ঠান ও কঠোর তপস্যার পরিবর্তে সহজ পথে নির্বাণ লাভের কথা বলে।
চর্যাপদে যে ধর্মীয় ধারণাগুলি পাওয়া যায় তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো:
- শূন্যতা: জগতের সবকিছুই শূন্য বা ফাঁকা, এর কোনো স্থায়ী সত্তা নেই।
- করুণা: সকল জীবের প্রতি সহানুভূতি ও দয়ার ভাব।
- বোধিচিত্ত: সর্ব জীবের মুক্তির জন্য জ্ঞান লাভের ঐকান্তিক ইচ্ছা।
- সহজ পথ: রাগ, দ্বেষ, মোহ ইত্যাদি রিপুকে দমন করে স্বাভাবিক ও सहज জীবনযাপনের মাধ্যমে মুক্তি লাভ।
- কায়াসাধনা: দেহকে কেন্দ্র করে আধ্যাত্মিক সাধনা।
সুতরাং, চর্যাপদের মূল ধর্মীয় ভিত্তি হলো বৌদ্ধ সহজিয়া মতবাদ।
প্রশ্নঃ উল্লিখিতদের মধ্যে কে প্রাচীন যুগের কবি নন?
[ বিসিএস ৪০তম ]
উল্লিখিতদের মধ্যে রমনীপাদ প্রাচীন যুগের কবি নন।
কাহুপাদ, লুইপাদ এবং শান্তিপাদ—এই তিনজনই চর্যাপদের গুরুত্বপূর্ণ কবি এবং প্রাচীন যুগের অন্তর্ভুক্ত। রমনীপাদ সম্ভবত পরবর্তীকালের কোনো কবি বা পদকর্তা। চর্যাপদের সিদ্ধাচার্যদের মধ্যে তার নাম পাওয়া যায় না।
প্রশ্নঃ ‘সন্ধ্যাভাষা’ কোন সাহিত্যকর্মের সঙ্গে যুক্ত?
[ বিসিএস ৩৮তম ]
সন্ধ্যাভাষা হলো একটি বিশেষ ধরনের ভাষা, যা বাংলা ভাষার প্রাচীনতম নিদর্শন চর্যাপদে ব্যবহৃত হয়েছে। এটি এমন একটি ভাষাশৈলী যেখানে শব্দের দুটি অর্থ থাকে – একটি সাধারণ বা আক্ষরিক অর্থ এবং অন্যটি গূঢ় বা নিগূঢ় অর্থ।
নামকরণের কারণ
'সন্ধ্যা' শব্দের অর্থ হলো দিনের আলো-আঁধারির সময়। যেমন সন্ধ্যায় সবকিছু স্পষ্টভাবে দেখা যায় না, তেমনি সন্ধ্যাভাষার অর্থও সহজে বোঝা যায় না। এটি খানিকটা বোঝা যায়, আবার খানিকটা দুর্বোধ্য থাকে। পণ্ডিত হরপ্রসাদ শাস্ত্রী চর্যাপদের ভাষাকে এই 'সন্ধ্যাভাষা' বলে অভিহিত করেন। অনেক পণ্ডিতের মতে, 'সন্ধা' শব্দটি 'সম্ + ধ্যেয়' থেকে এসেছে, যার অর্থ 'যা সম্যক ধ্যানের দ্বারা বুঝতে হয়' অথবা 'অভিপ্রায়িক বা উদ্দেশ্যমূলক বচন'।
সন্ধ্যাভাষার বৈশিষ্ট্য
- দ্বি-অর্থবোধকতা: এটি সন্ধ্যাভাষার প্রধান বৈশিষ্ট্য। প্রতিটি শব্দ বা বাক্যকে দুইভাবে ব্যাখ্যা করা যায়: একটি বাইরের সাধারণ অর্থ এবং অন্যটি সহজিয়া বৌদ্ধ সাধকদের সাধন-ভজনের গূঢ় তত্ত্ব।
- রূপক ও প্রতীক ব্যবহার: সন্ধ্যাভাষা প্রচুর পরিমাণে রূপক, প্রতীক ও হেঁয়ালি ব্যবহার করে। উদাহরণস্বরূপ, 'নৌকা' বলতে হয়তো দেহকে বোঝানো হয়েছে, আর 'নদী' বলতে সংসারের মায়াকে।
- গোপনীয়তা: এই ভাষা বৌদ্ধ সহজিয়া সাধকদের সাধন-ভজনের গোপন তত্ত্বগুলো সাধারণ মানুষের কাছে অস্পষ্ট রাখার জন্য ব্যবহৃত হতো। এটি ছিল তাদের একটি নির্দিষ্ট সম্প্রদায়িক বা ধর্মীয় ভাষা।
- দুর্বোধ্যতা: এর গূঢ় অর্থের কারণে সাধারণ পাঠক বা শ্রোতার কাছে এই ভাষা দুর্বোধ্য মনে হয়।
চর্যাপদে সন্ধ্যাভাষার উদাহরণ
চর্যাপদের বহু পদে সন্ধ্যাভাষার ব্যবহার দেখা যায়। যেমন, একটি বিখ্যাত পদ:
"কাআ তরুবর পঞ্চ বি ডাল। চঞ্চল চীএ পইঠা কাল।।"
- সাধারণ অর্থ: শরীর একটি গাছ, যার পাঁচটি ডাল আছে। চঞ্চল মনে কাল বা মৃত্যু প্রবেশ করেছে।
- গূঢ় অর্থ: দেহকে একটি গাছের সাথে তুলনা করা হয়েছে, যার পাঁচটি ডাল হলো পঞ্চেন্দ্রিয়। চঞ্চল মন বা চিত্তের কারণেই সাধনায় বিঘ্ন সৃষ্টি হয় এবং সাধন-ভজনের মৃত্যু ঘটে।
সন্ধ্যাভাষা বাংলা সাহিত্যের প্রাচীনতম নিদর্শন হিসেবে চর্যাপদকে আরও রহস্যময় এবং গবেষণার বিষয়বস্তু করে তুলেছে।
প্রশ্নঃ “বিদ্যাপতি” কোন রাজসভার কবি ছিলেন?
[ বিসিএস ৩৮তম ]
বিদ্যাপতি ছিলেন মিথিলার রাজসভার কবি।
তিনি মূলত পঞ্চদশ শতকের একজন মৈথিলি কবি ছিলেন, যিনি মিথিলা রাজ্যের রাজা শিবসিংহ-এর সভাকবি হিসেবে সবচেয়ে বেশি পরিচিতি লাভ করেন। রাজা শিবসিংহ তাকে 'কবিকণ্ঠহার' উপাধিতে ভূষিত করেছিলেন।
বিদ্যাপতি শুধু শিবসিংহেরই নন, তিনি তার দীর্ঘ জীবনে আরও কয়েকজন রাজা ও রানীর পৃষ্ঠপোষকতা পেয়েছিলেন, যার মধ্যে রাজা কীর্তিসিংহ, নরসিংহ, ধীরসিংহ এবং রানী বিশ্বাসাদেবী ও লছিমা দেবীও অন্তর্ভুক্ত।
যদিও তিনি মূলত মৈথিলি ভাষায় পদ রচনা করতেন, তার রচিত ব্রজবুলি ভাষার পদাবলী বাংলা, আসাম, উড়িষ্যা এবং পূর্ব বিহারে অত্যন্ত জনপ্রিয়তা লাভ করে। এই কারণে বাঙালিরাও তাকে নিজেদের কবি হিসেবে অত্যন্ত শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করে।
প্রশ্নঃ ‘চর্যাচর্যবিনিশ্চয়’-এর অর্থ কী?
[ বিসিএস ৩৭তম ]
'চর্যাচর্যবিনিশ্চয়' হলো চর্যাপদের মূল শিরোনাম। এর অর্থ হলো:
- করণীয় ও অকরণীয় সম্পর্কে সুনিশ্চিত জ্ঞান
- আচরণীয় ও অনাচরণীয়ের বিচার
- কী করা উচিত এবং কী করা উচিত নয়, তার নিশ্চিত সিদ্ধান্ত
সহজ ভাষায়, এটি এমন একটি বিষয় যা ভালো-মন্দ, করণীয়-অকরণীয়, বা সঠিক-বেঠিক আচরণের মধ্যে পার্থক্য নির্ণয় করে। চর্যাপদগুলো মূলত বৌদ্ধ সহেজিয়া সাধকদের গুহ্য সাধনপদ্ধতি ও দর্শনের ইঙ্গিতবাহী, এবং 'চর্যাচর্যবিনিশ্চয়' বলতে সেই সাধনার পথ ও পদ্ধতির সঠিক দিকনির্দেশনাকেই বোঝানো হয়েছে।
প্রশ্নঃ সবচেয়ে বেশি চর্যাপদ পাওয়া গেছে কোন কবির?
[ বিসিএস ৩৫তম ]
সবচেয়ে বেশি চর্যাপদ পাওয়া গেছে কাহ্নপা (Kanha) কবির। তাঁর লেখা ১৩টি চর্যাপদ আবিষ্কৃত হয়েছে।
প্রশ্নঃ বাংলা সাহিত্যের প্রাচীন যুগের নিদর্শন কোনটি?
[ বিসিএস ৩৫তম ]
'দোহাকোষ' হলো বৌদ্ধ সহজিয়া সাধকদের রচিত সাধনতত্ত্বমূলক দোহা বা গাথা সংকলন।
এটি চর্যাপদের মতোই সিদ্ধাচার্যদের দ্বারা রচিত এক ধরনের রূপকাশ্রয়ী ও সন্ধ্যাভাষার (আঁধারি ভাষা) কবিতা। দোহাকোষের ভাষা মূলত অপভ্রংশ (যা প্রাচীন ভারতীয় আর্য ভাষা এবং আধুনিক ভারতীয় আর্য ভাষার মধ্যবর্তী একটি স্তর)। যদিও দোহাকোষের কিছু অংশ বাংলা ভাষার আদি রূপের কাছাকাছি বলে বিবেচিত হয় এবং চর্যাপদের মতো এটিও সেই সময়ের ধর্মীয় ও সামাজিক চেতনার একটি গুরুত্বপূর্ণ নিদর্শন।
সংক্ষেপে, এটি প্রাচীন বৌদ্ধ সাধনতত্ত্ব ও অপভ্রংশ ভাষার (এবং কিছু ক্ষেত্রে প্রাচীন বাংলা ভাষার কাছাকাছি) কাব্য নিদর্শন।
প্রশ্নঃ চর্যাপদের টীকাকারের নাম কী?
[ বিসিএস ৪১তম ]
চর্যাপদের টীকাকারের নাম হলো মুনিদত্ত।
তিনি চর্যাপদের পদগুলোর একটি বিখ্যাত টীকা রচনা করেন, যা ‘চর্যাশ্চর্যটীকা’ নামে পরিচিত। এই টীকাটি চর্যাপদের অর্থ ও তাৎপর্য বুঝতে বিশেষভাবে সহায়ক।
প্রশ্নঃ ‘চর্যাপদ’ কত সালে আবিষ্কৃত হয়?
[ বিসিএস ৩৪তম ]
বাংলা ভাষার আদি নিদর্শন চর্যাপদ ১৯০৭ সালে মহামহোপাধ্যায় হরপ্রসাদ শাস্ত্রী নেপালের রাজদরবারের গ্রন্থাগার থেকে আবিষ্কার করেন।
প্রশ্নঃ বাংলা সাহিত্যের পঠন-পাঠনের সুবিধার জন্য বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসকে তিনটি যুগে ভাগ করা হয়েছে- বাংলা সাহিত্যের প্রাচীন যুগ।
[ বিসিএস ৩৪তম ]
বাংলা সাহিত্যের পঠন-পাঠনের সুবিধার জন্য এর ইতিহাসকে তিনটি প্রধান যুগে ভাগ করা হয়েছে:
- বাংলা সাহিত্যের প্রাচীন যুগ: এই যুগের সময়কাল হলো ৬৫০-১২০০ খ্রিস্টাব্দ। চর্যাপদকে এই যুগের একমাত্র নির্ভরযোগ্য সাহিত্যিক নিদর্শন হিসেবে ধরা হয়।
- বাংলা সাহিত্যের মধ্যযুগ: ১২০০-১৮০০ খ্রিস্টাব্দ।
- বাংলা সাহিত্যের আধুনিক যুগ: ১৮০০ খ্রিস্টাব্দ থেকে বর্তমান পর্যন্ত।
সুতরাং, সঠিক উত্তর হলো: গঃ ৬৫০-১২০০
প্রশ্নঃ চর্যাপদ কোন ছন্দে লেখা?
[ বিসিএস ৩৩তম ]
প্রশ্নঃ বাংলা ভাষার আদি নিদর্শন চর্যাপদ আবিষ্কৃত হয় কত সালে?
[ বিসিএস ৩১তম ]
বাংলা ভাষার প্রাচীন যুগের একমাত্র নির্ভরযোগ্য নিদর্শন চর্যাপদ মহামহোপাধ্যায় হরপ্রসাদ শাস্ত্রী কর্তৃক ১৯০৭ সালে নেপালের রাজগ্রন্থাগার থেকে আবিষ্কৃত হয়। বৌদ্ধ সহজিয়াগণের রচিত চর্যাপদ ১৯১৬ সালে কলকাতার বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদ থেকে আধুনিক লিপিতে প্রকাশিত হয়। এর সম্পাদনা করেন হরপ্রসাদ শাস্ত্রী। চর্যার প্রাপ্ত পুঁথিতে ৫১টি গান ছিল; যার সাড়ে ৪৬টি পাওয়া গেছে।
প্রশ্নঃ বাংলা সাহিত্যের আদি কবি কে?
[ বিসিএস ২৯তম ]
বাংলা সাহিত্যের প্রাচীন যুগের একমাত্র নির্ভরযোগ্য নিদর্শন চর্যাপদ। চর্যাপদে ২৩, মতান্তরে ২৪ জন কবি ছিলেন। চর্যাপদের পদসংখ্যা হলো ৫১টি। ড. হরপ্রসাদ শাস্ত্রী ১নং পদের পদকর্তা হিসেবে লুইপার নাম পান। তাই, তার মতে বাংলা সাহিত্যের আদি কবি লুইপা। কিন্তু ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহর মতে বাংলা সাহিত্যের আদি কবি হলো শবরপা।
প্রশ্নঃ প্রাচীনতম বাঙালি মুসলমান কবি কে?
[ বিসিএস ২৯তম ]
প্রাচীনতম বাঙালি মুসলমান কবি ছিলেন শাহ মুহম্মদ সগীর। তাঁর বিখ্যাত কাব্য “ইউসুফ জুলেখা”। এছাড়া আলাওল ছিলেন মধ্যযুগের শ্রেষ্ঠ কবি, সৈয়দ সুলতানও মধ্যযুগের অন্যতম উল্লেখযোগ্য কবি ছিলেন।
প্রশ্নঃ বাংলা কথ্য ভাষার আদি গ্রন্থ কোনটি?
[ বিসিএস ২৯তম ]
‘কৃপার শাস্ত্রের অর্থভেদ’ (১৭৩৫) মনোএল দ্য আসসুম্পসাঁউ নামক পর্তুগিজ খ্রিষ্টান মিশনারি কর্তৃক রচিত বাংলা গদ্যগ্রন্থ। ১৭৪৩ সালে লিসবন শহর থেকে গ্রন্থটি রোমান লিপিতে মুদ্রিত হয়।
প্রশ্নঃ চর্যাপদ আবিষ্কৃত হয় কোথা থেকে?
[ বিসিএস ২৮তম ]
বাংলা সাহিত্যের প্রাচীন যুগের একমাত্র নিদর্শন ‘চর্যাপদ’। ‘চর্যাপদ’ হলো গানের সংকলন, যা রচনা করেন বৌদ্ধ সহজিয়াগণ। মহামহোপাধ্যায় হরপ্রসাদ শাস্ত্রী নেপালের রাজগ্রন্হশালা তথা নেপালের রয়েল লাইব্রেরি থেকে ১৯০৭ খ্রিষ্টাব্দে ‘চর্যাপদ’ আবিষ্কার করেন। অপরদিকে ১৯০৯ সালে বাঁকুড়ার এক গৃহস্থের গোয়াল ঘর থেকে ‘শ্রীকৃষ্ণকীর্তন’ কাব্য আবিষ্কার করেন বসন্তরঞ্জন রায় বিদ্বদ্বল্লভ।
প্রশ্নঃ চাঁদ সওদাগর বাংলা কোন কাব্যধারার চরিত্র?
[ বিসিএস ২৩তম ]
মঙ্গলকাব্যগুলোর মধ্যে মনসামঙ্গল প্রাচীনতম। সাপের দেবী মনসার পূজা প্রচারের কাহিনিই এ কাব্যের বিষয়বস্তু। এ কাব্যের মূল চরিত্রগুলো হলো চাঁদ সওদাগর, বেহুলা, লখিন্দর ও মনসা দেবী। চণ্ডীমঙ্গল কাব্য হলো চণ্ডী (পার্বতীর রূপভেদ) দেবীকে অবলম্বন করে রচিত মঙ্গলকাব্য। ধর্মমঙ্গল হলো পঞ্চদশ থেকে অষ্টাদশ শতাব্দী পর্যন্ত পশ্চিমবঙ্গের বীরভূম, বর্ধমান, বাকুঁড়া, মেদিনীপুর ইত্যাদি অঞ্চলে ধর্মঠাকুর বা ধর্ম নামের যে দেবতাকে নিম্নশ্রেণী ও কোথাও কোথাও উচ্চশ্রেণীর হিন্দুরা পূজা করত, সেই কাহিনী অবলম্বনে রচিত কাব্য। এ কাব্যের মূল চরিত্রগুলো হলো-হরিশ্চন্দ্র, মদনা, লুইচন্দ্র, কর্ণসেন, গৌড়েশ্বর, লাউসেন।
প্রশ্নঃ দোভাষী পুঁথি বলতে কি বোঝায়?
[ বিসিএস ২২তম ]
'দোভাষী পুঁথি' শুধু দুটি ভাষায় রচিত পুঁথি নয় । বাংলা, হিন্দি, ফারসি, আরবি, তুর্কি ইত্যাদি ভাষার সংমিশ্রণে রচিত পুঁথিই হলো 'দোভাষী পুঁথি' ।
প্রশ্নঃ বাংলা ভাষার প্রথম কাব্য সংকলন ‘চর্যাপদ’ এর আবিষ্কারক-
[ বিসিএস ১৭তম ]
বাংলা সাহিত্যের আদি নিদর্শন চর্যাপদ। রাজা রাজেন্দ্রলাল মিত্র ১৮৮২ সালে ‘Sanskrit Buddist Literature in Nepal’ গ্রন্হে সর্বপ্রথম নেপালের বৌদ্ধতান্ত্রিক সাহিত্যের কথা প্রকাশ করেন। মহামহোপাধ্যায় হরপ্রসাদ শাস্ত্রী নেপালে তাঁর তৃতীয় ভ্রমণে নেপালের রয়েল লাইব্রেরি থেকে ১৯০৭ সালে ‘চর্যাচর্যবিনিশ্চয়’ নামক পুঁথিটি আবিষ্কার করেন । তার সম্পাদনায় ১৯১৬ সালে বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদ থেকে ‘হাজার বছরের পুরাণ বাঙ্গালা ভাষায় বৌদ্ধগান ও দোহা’ নামে প্রকাশিত হয়।
প্রশ্নঃ পুঁথি সাহিত্যের প্রাচীনতম লেখক-
[ বিসিএস ১১তম ]
উপরিউক্ত কবিদের মধ্যে শুধু সৈয়দ হামজা পুঁথি সাহিত্য রচনা করেন। তবে তিনি প্রথম আদি রচয়িতা নন। পুঁথি সাহিত্যের প্রথম সার্থক ও জনপ্রিয় লেখক ফকির গরীবুল্লাহ।
প্রশ্নঃ বাংলা ভাষার প্রাচীন যুগের সময়কাল-
[ প্রা.বি.স.শি. 29-03-2024 ]
বাংলা ভাষার প্রাচীন যুগের সময়কাল সাধারণভাবে ধরা হয় আনুমানিক ৬৫০ খ্রিস্টাব্দ থেকে ১২০০ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত।
তবে, ভাষাবিদদের মধ্যে এই সময়কাল নিয়ে কিছু ভিন্নমত রয়েছে। ডক্টর মুহম্মদ শহীদুল্লাহর মতে চর্যাপদের উৎপত্তিকাল ৬৫০ থেকে ১২০০ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে। অন্যদিকে, ডক্টর সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায় এই সময়কাল ৯৫০ থেকে ১২০০ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত বলে মনে করেন।
সুতরাং, বিকল্প হিসেবে ৯৫০-১২০০ খ্রিস্টাব্দ সময়কালটিও ধরা যেতে পারে। তবে সাধারণভাবে ৬৫০-১২০০ খ্রিস্টাব্দ কেই বাংলা ভাষার প্রাচীন বা আদি যুগের সময়কাল হিসেবে ধরা হয়। এই যুগের একমাত্র নির্ভরযোগ্য সাহিত্যিক নিদর্শন হলো চর্যাপদ।
প্রশ্নঃ চর্যাপদ কোন ছন্দে লেখা?
[ প্রা.বি.স.শি. 08-12-2023 ]
চর্যাপদ মূলত মাত্রাবৃত্ত ছন্দে লেখা। তবে এর মধ্যে অক্ষরবৃত্ত ও স্বরবৃত্তের কিছু প্রভাবও দেখা যায়।
অধিকাংশ পণ্ডিত মনে করেন চর্যাপদের মূল ছন্দ মাত্রাবৃত্ত। এই ছন্দে পর্ব সাধারণত ৪ মাত্রার হয় এবং কিছু ক্ষেত্রে ৫ বা ৬ মাত্রারও দেখা যায়।
যদিও এর কাঠামো পুরোপুরি মাত্রাবৃত্তের নিয়ম মেনে চলে না এবং কিছু ক্ষেত্রে অক্ষরবৃত্ত ও স্বরবৃত্তের বৈশিষ্ট্যও লক্ষ্য করা যায়, তবে সামগ্রিকভাবে এটিকে মাত্রাবৃত্তের কাছাকাছি ছন্দ হিসেবেই গণ্য করা হয়।
প্রশ্নঃ হরপ্রসাদ শাস্ত্রী প্রথম কোথা থেকে চর্যাপদ আবিষ্কার করেন?
[ প্রা.বি.স.শি. 20-05-2022 ]
হরপ্রসাদ শাস্ত্রী প্রথম নেপালের রাজদরবারের গ্রন্থাগার (Royal Library of Nepal) থেকে চর্যাপদ আবিষ্কার করেন।
তিনি ১৯০৭ খ্রিস্টাব্দে এই অমূল্য সাহিত্যকর্মটি খুঁজে পান। এই আবিষ্কার বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করে, কারণ এর মাধ্যমেই বাংলা ভাষার প্রাচীনতম রূপ সম্পর্কে জানা যায়।