আমাদের স্কুল

সেটিং

বহুনির্বাচনি প্রশ্নের দেখানোর অপশনঃ
শুধুমাত্র উত্তর 2 অপশন
3 অপশন 4 অপশন
বহুনির্বাচনি প্রশ্নের অপশন প্রদর্শনঃ
রো আকারে কলাম আকারে
বহুনির্বাচনি প্রশ্নের উত্তরঃ
লুকান বোল্ড করুন
দেখান দেখান ও বোল্ড করুন
বহুনির্বাচনি প্রশ্নের ব্যাখ্যাঃ
দেখান লুকান নিচে লুকান
থিম নির্বাচন করুনঃ
ফন্ট সাইজঃ
15

প্রশ্নঃ বাইজেনটাইন সাম্রাজ্যের রাজধানী ছিল কোন নগরী?

[ বিসিএস ৩৯তম ]

ক. লিসবন
খ. কনস্টান্টিনোপল
গ. প্যারিস
ঘ. ভিয়েনা
উত্তরঃ কনস্টান্টিনোপল
ব্যাখ্যাঃ

বাইজেনটাইন সাম্রাজ্য, যা পূর্ব রোমান সাম্রাজ্য নামেও পরিচিত, ছিল রোমান সাম্রাজ্যের পূর্বাঞ্চলীয় অংশ যা পশ্চিম রোমান সাম্রাজ্যের পতনের (৪৭৬ খ্রিষ্টাব্দ) পরেও প্রায় এক হাজার বছর ধরে টিকে ছিল। এর রাজধানী ছিল কনস্টান্টিনোপল (বর্তমান ইস্তাম্বুল, তুরস্ক)।

গুরুত্বপূর্ণ দিকসমূহ:

১. রাজধানী কনস্টান্টিনোপল:

  • ইউরোপ ও এশিয়ার সংযোগস্থলে অবস্থিত হওয়ায় এটি ছিল একটি কৌশলগত ও বাণিজ্যিকভাবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ শহর।
  • এর শক্তিশালী প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা শহরটিকে দীর্ঘকাল ধরে অক্ষত রাখতে সাহায্য করেছিল।
  • এটি ছিল বাইজেনটাইন সাম্রাজ্যের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্র।

২. সংস্কৃতি ও ভাষা:

  • যদিও এটি রোমান সাম্রাজ্যের উত্তরাধিকার ছিল, বাইজেনটাইন সংস্কৃতিতে গ্রিক প্রভাব ছিল প্রবল। গ্রিক ছিল সাম্রাজ্যের প্রধান ভাষা (ল্যাটিনের পরিবর্তে)।
  • রোমান আইন ও গ্রিক দর্শনের সংমিশ্রণে একটি অনন্য সংস্কৃতি গড়ে ওঠে।

৩. ধর্ম: অর্থোডক্স খ্রিস্ট ধর্ম:

  • বাইজেনটাইন সাম্রাজ্য ছিল অর্থোডক্স খ্রিস্টধর্মের কেন্দ্র। কনস্টান্টিনোপলের প্যাট্রিয়ার্ক ছিলেন অর্থোডক্স চার্চের প্রধান।
  • পশ্চিমা ক্যাথলিক চার্চের সাথে তাদের প্রায়শই ধর্মতাত্ত্বিক ও রাজনৈতিক বিরোধ লেগে থাকত, যা ১০৫৪ খ্রিষ্টাব্দে 'পূর্ব-পশ্চিম বিভেদ' (East-West Schism) এর মাধ্যমে চূড়ান্ত রূপ নেয়।

৪. আইন ব্যবস্থা:

  • জাস্টিনিয়ানের কোড (Corpus Juris Civilis): সম্রাট জাস্টিনিয়ান আই (৫২৭-৫৬৫ খ্রিষ্টাব্দ) রোমান আইনের একটি ব্যাপক সংকলন তৈরি করেন, যা 'জাস্টিনিয়ানের কোড' নামে পরিচিত। এটি বিশ্বের আইনি ইতিহাসে একটি যুগান্তকারী দলিল এবং আধুনিক ইউরোপীয় আইনের ভিত্তি।

৫. সামরিক শক্তি:

  • বাইজেনটাইন সেনাবাহিনী ছিল অত্যন্ত সুসংগঠিত এবং প্রশিক্ষিত। তারা 'গ্রিক ফায়ার' (Greek Fire) এর মতো উন্নত সামরিক প্রযুক্তি ব্যবহার করত।
  • মুসলিম খিলাফত, বুলগার, স্লাভ এবং পশ্চিমা ক্রুসেডারদের বিরুদ্ধে তারা দীর্ঘকাল যুদ্ধ করে টিকে ছিল।

৬. পতন:

  • সাম্রাজ্য ধীরে ধীরে দুর্বল হতে থাকে বিভিন্ন অভ্যন্তরীণ সংঘাত, অর্থনৈতিক সমস্যা এবং বাইরের শক্তির (বিশেষ করে সেলজুক তুর্কি এবং অটোমান তুর্কি) ক্রমাগত আক্রমণের কারণে।
  • ১৪৫৩ সালের ২৯ মে: অটোমান সুলতান দ্বিতীয় মেহমেদের নেতৃত্বে তুর্কি বাহিনী কনস্টান্টিনোপল দখল করে নেয়। এটি ছিল বাইজেনটাইন সাম্রাজ্যের চূড়ান্ত পতন।

ঐতিহাসিক তাৎপর্য:

  • প্রাচীন গ্রিক-রোমান সংস্কৃতির সংরক্ষণ: বাইজেনটাইন সাম্রাজ্য এক হাজার বছর ধরে প্রাচীন গ্রিক ও রোমান জ্ঞান, দর্শন, সাহিত্য এবং শিল্পকলার সংরক্ষণ ও বিস্তারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
  • ইউরোপকে রক্ষা: এটি বহু শতাব্দী ধরে এশিয়া থেকে ইউরোপে মুসলিম আক্রমণ ঠেকিয়ে রেখেছিল, যা ইউরোপের খ্রিস্টীয় সংস্কৃতি ও সভ্যতার বিকাশে পরোক্ষভাবে সহায়তা করেছিল।
  • ইউরোপীয় রেনেসাঁসের অনুপ্রেরণা: বাইজেনটাইন সাম্রাজ্যের পতন এবং গ্রিক পণ্ডিতদের পশ্চিমা ইউরোপে স্থানান্তর রেনেসাঁসের বিকাশে ভূমিকা রেখেছিল।
  • অর্থোডক্স চার্চের কেন্দ্র: পূর্ব ইউরোপ এবং রাশিয়ায় অর্থোডক্স খ্রিস্টধর্মের বিস্তার ও প্রসারে বাইজেনটাইন সাম্রাজ্যের অবদান অনস্বীকার্য।

সংক্ষেপে, বাইজেনটাইন সাম্রাজ্য ছিল একটি দীর্ঘস্থায়ী এবং প্রভাবশালী শক্তি, যা রোমান সাম্রাজ্যের উত্তরাধিকার বহন করে এবং মধ্যযুগীয় ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্যের ইতিহাসে গভীর প্রভাব ফেলেছিল।