আমাদের স্কুল

সেটিং

বহুনির্বাচনি প্রশ্নের দেখানোর অপশনঃ
শুধুমাত্র উত্তর 2 অপশন
3 অপশন 4 অপশন
বহুনির্বাচনি প্রশ্নের অপশন প্রদর্শনঃ
রো আকারে কলাম আকারে
বহুনির্বাচনি প্রশ্নের উত্তরঃ
লুকান বোল্ড করুন
দেখান দেখান ও বোল্ড করুন
বহুনির্বাচনি প্রশ্নের ব্যাখ্যাঃ
দেখান লুকান নিচে লুকান
থিম নির্বাচন করুনঃ
ফন্ট সাইজঃ
15

প্রশ্নঃ মায়া সভ্যতা বিশ্বের কোন অঞ্চলে বিরাজমান ছিল?

[ বিসিএস ৩৯তম ]

ক. পূর্ব এশিয়া
খ. মধ্য আমেরিকা
গ. মধ্যপ্রাচ্য
ঘ. পূর্ব আফ্রিকা
উত্তরঃ মধ্য আমেরিকা
ব্যাখ্যাঃ

মায়া সভ্যতা ছিল আমেরিকার অন্যতম উন্নত ও রহস্যময় প্রাচীন সভ্যতা। এটি মেসোআমেরিকার (বর্তমান দক্ষিণ মেক্সিকো, গুয়াতেমালা, বেলিজ, এল সালভাদর এবং হন্ডুরাসের অংশবিশেষ) ক্রান্তীয় নিম্নভূমিতে বিকশিত হয়েছিল।

সময়কাল: মায়া সভ্যতার বিকাশকে সাধারণত তিনটি প্রধান যুগে ভাগ করা হয়:

  • প্রাক-ধ্রুপদী যুগ (Preclassic Period): প্রায় ২০০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ - ২৫০ খ্রিস্টাব্দ। এই সময়ে প্রথম মায়া নগরীগুলো গড়ে ওঠে এবং প্রাথমিক কৃষি পদ্ধতি ও সামাজিক কাঠামো বিকশিত হয়।
  • ধ্রুপদী যুগ (Classic Period): প্রায় ২৫০ খ্রিস্টাব্দ - ৯০০ খ্রিস্টাব্দ। এটি মায়া সভ্যতার স্বর্ণযুগ হিসেবে পরিচিত। এই সময়ে বড় বড় শহর, পিরামিড, মন্দির এবং প্রাসাদ নির্মিত হয়। জ্যোতির্বিজ্ঞান, গণিত এবং লেখার পদ্ধতি এই সময়ে চূড়ান্ত রূপ লাভ করে।
  • উত্তর-ধ্রুপদী যুগ (Postclassic Period): প্রায় ৯০০ খ্রিস্টাব্দ - ১৫২১ খ্রিস্টাব্দ। ধ্রুপদী যুগের পতনের পর, কিছু মায়া শহর টিকে ছিল এবং নতুন কিছু শহর গড়ে উঠেছিল, তবে স্পেনীয় বিজয়ের সাথে সাথে এই সভ্যতার পতন ঘটে।

উল্লেখযোগ্য শহর ও কেন্দ্রসমূহ:

  • তিকাল (Tikal): ধ্রুপদী যুগের অন্যতম বৃহত্তম ও শক্তিশালী শহর-রাজ্য, যা বর্তমানে গুয়াতেমালায় অবস্থিত।
  • পালাঙ্কে (Palenque): স্থাপত্য এবং ভাস্কর্য শিল্পের জন্য বিখ্যাত, মেক্সিকোতে অবস্থিত।
  • চিচেন ইৎজা (Chichen Itza): উত্তর-ধ্রুপদী যুগের একটি গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র, ইউকাটান উপদ্বীপে অবস্থিত। এখানে কুুকুলকানের পিরামিড উল্লেখযোগ্য।
  • কোপান (Copan): হন্ডুরাসে অবস্থিত, জ্যোতির্বিজ্ঞান এবং ভাস্কর্য শিল্পের জন্য পরিচিত।

মায়া সভ্যতার প্রধান অবদান ও বৈশিষ্ট্য:

১. লিখিত ভাষা ও লিপি: মায়ারা মেসোআমেরিকার একমাত্র সভ্যতা যারা একটি পূর্ণাঙ্গ লিখিত ভাষা তৈরি করেছিল, যা চিত্রলিপি (hieroglyphic) হিসেবে পরিচিত। এটি কাঠ, পাথর, সিরামিক এবং কোডেক্সে (এক ধরণের হাতে লেখা বই) খোদাই করা হতো।

২. গণিত: মায়া গণিত ছিল অত্যন্ত উন্নত। তারা শূন্যের ধারণা ব্যবহার করত, যা সেই সময়ে পৃথিবীর খুব কম সভ্যতায় প্রচলিত ছিল। তাদের সংখ্যা পদ্ধতি ছিল ২০-ভিত্তিক (vigesimal)।

৩. জ্যোতির্বিজ্ঞান ও ক্যালেন্ডার: মায়ারা জ্যোতির্বিজ্ঞানে অবিশ্বাস্যভাবে পারদর্শী ছিল। তারা সূর্য, চন্দ্র এবং শুক্র গ্রহের গতিবিধি সম্পর্কে নির্ভুল গণনা করত। তাদের দুটি প্রধান ক্যালেন্ডার ছিল:

  • সোলকিন (Tzolkin): ২৬০ দিনের ধর্মীয় ক্যালেন্ডার।
  • হাব (Haab'): ৩৬৫ দিনের সৌর ক্যালেন্ডার, যা আধুনিক ক্যালেন্ডারের মতোই ছিল।
  • এই দুটি ক্যালেন্ডারকে সমন্বয় করে তারা একটি দীর্ঘ গণনার পদ্ধতি (Long Count Calendar) তৈরি করেছিল, যা দীর্ঘ সময় ধরে ঘটনাগুলো রেকর্ড করতে ব্যবহৃত হতো।

৪. স্থাপত্য: মায়ারা বিশাল পিরামিড, মন্দির, প্রাসাদ, এবং বল কোর্ট নির্মাণ করত। তাদের স্থাপত্যে জটিল কারুকার্য এবং জ্যোতির্বিজ্ঞানের জ্ঞান প্রতিফলিত হতো।

৫. কৃষি: তারা কর্ন (ভূট্টা), মটরশুঁটি, এবং স্কোয়াশ (কুমড়া জাতীয় সবজি) চাষ করত। উন্নত সেচ ব্যবস্থা এবং 'মিলপা' (Milpa) নামক স্থানান্তর চাষ পদ্ধতি ব্যবহার করত।

৬. ধর্ম: মায়ারা বহু-ঈশ্বরবাদী ছিল। তাদের ধর্মে প্রকৃতি, জ্যোতির্বিজ্ঞান এবং রাজাদের গুরুত্ব ছিল। মানব বলিদান তাদের ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানের একটি অংশ ছিল, যদিও ইনকা বা অ্যাজটেকদের মতো এত ব্যাপক ছিল না।

৭. রাজনৈতিক কাঠামো: মায়া সভ্যতা কোনো একক সাম্রাজ্য ছিল না, বরং এটি ছিল স্বাধীন শহর-রাজ্যগুলোর একটি সমষ্টি, যারা প্রায়শই একে অপরের সাথে যুদ্ধ করত। প্রতিটি শহর-রাজ্যের নিজস্ব শাসক (Ahau) ছিল।