অবস্থান অনুসারে বাংলাদেশের টারশিয়ারি পাহাড়কে ২ ভাগে ভাগ করা হয়।
বাংলাদেশের টারশিয়ারি যুগের পাহাড়গুলো প্রায় ২০ লক্ষ বছর পূর্বে হিমালয় পর্বত উত্থিত হওয়ার সময় সৃষ্টি হয়েছিল। এই পাহাড়গুলো দেশের মোট ভূমির প্রায় ১২% এলাকা নিয়ে গঠিত। এদের অবস্থান এবং বৈশিষ্ট্য অনুসারে প্রধানত দুটি ভাগে ভাগ করা হয়:
১. দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের পাহাড়সমূহ: এই অংশে রাঙ্গামাটি, বান্দরবান, খাগড়াছড়ি, কক্সবাজার এবং চট্টগ্রাম জেলার পূর্বাংশের পাহাড়গুলো অন্তর্ভুক্ত। এগুলোর গড় উচ্চতা প্রায় ৬১০ মিটার এবং উত্তর-দক্ষিণে লম্বালম্বিভাবে বিস্তৃত। তাজিংডং (বিজয়) ও কেওক্রাডং-এর মতো বাংলাদেশের সর্বোচ্চ শৃঙ্গগুলো এই অঞ্চলেই অবস্থিত।
২. উত্তর ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলের পাহাড়সমূহ: এই অংশে সিলেট, মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জ জেলার দক্ষিণের পাহাড় এবং ময়মনসিংহ ও নেত্রকোনা জেলার উত্তরাংশের ছোট ছোট টিলা ও পাহাড়গুলো অন্তর্ভুক্ত। এ অঞ্চলের পাহাড়গুলোর উচ্চতা সাধারণত দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের পাহাড়ের তুলনায় কম, প্রায় ২৪৪ মিটারের বেশি নয়।
প্রশ্নঃ বাংলাদেশের পাহাড়শ্রেণি ভূ-তাত্ত্বিক যুগের ভূমিরূপ হচ্ছে-
[ বিসিএস ১৭তম ]
বাংলাদেশের প্রায় দুই তৃতীয়াংশই গঙ্গা - ব্রহ্মপুত্র -মেঘনা নদীদ্বারা বাহিত পলিমাটির সাহায্যে গঠিত সমতলভূমি দিয়ে আবৃত। কেবল পূর্বদিকে সিলেট, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম, এলাকার পূর্বাংশ বরাবর পাহাড় শ্রেণি উত্তর-দক্ষিণে বিস্তৃত। বাংলাদেশে বৃহত্তর বেঙ্গল বেসিন ( Bengal Basin)-এ অবস্থিত। বেঙ্গল বেসিন পশ্চিমে পশ্চিমবঙ্গ থেকে পূর্বে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্য এবং উত্তরে শিলং মালভূমির পাদদেশ থেকে দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর বরাবর বিস্তৃত। এ বেসিন মূলত টারশিয়ারি যুগের শিলাস্তর দিয়ে পরিপূর্ণ । তবে উত্তরবঙ্গে ভূগর্ভে অতি প্রাচীন পারসিয়ান যুগের শিলাস্তর বিদ্যমান।
প্রশ্নঃ বাংলাদেশের সবচেয়ে উঁচু পাহাড় চূড়ার নাম কি?
[ বিসিএস ১৩তম ]
সমুদ্র সমতল থেকে সাধারণত ৬০০-১০০০ মিটার উঁচু স্বল্প বিস্তৃত শিলাস্তুপকে পাহাড় এবং ১০০০ মিটারের অধিক উঁচু সুবিস্তৃত ও খাড়া ঢালবিশিষ্ট শিলাস্তুপকে পর্বত বলে। বাংলাদেশের সবচেয়ে উঁচু পাহাড় চূড়া বৃহত্তর ময়মনসিংহে অবস্থিত গারো পাহাড় এবং এটি টারশিয়ারি যুগে সৃষ্টি। বাংলাদেশের সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ তাজিংডং বা বিজয় এর উচ্চতা ১২৩১ মিটার। কেওক্রাডং বাংলাদেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ। এর উচ্চতা ১২৩০ মিটার। দুটিই বান্দরবান জেলার রুমা উপজেলায় অবস্থিত।
প্রশ্নঃ কিওক্রাডং-এর উচ্চতা প্রায়-
[ বিসিএস ১২তম ]
কিওক্রাডং বাংলাদেশের তৃতীয় সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ। এর উচ্চতা নিয়ে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন রকম তথ্য পাওয়া গিয়েছে। একসময় মনে করা হত এর উচ্চতা ১,২৩০ মিটার। তবে, আধুনিক গবেষণায় দেখা গেছে এর উচ্চতা ১,০০০ মিটারের বেশি নয়। শৃঙ্গের শীর্ষে সেনাবাহিনী কর্তৃক উৎকীর্ণ ফলকে এর উচ্চতা ৩,১৭১ ফুট লেখা আছে।
প্রশ্নঃ তোরাবোরা পাহাড় অবস্থিত কোন দেশে?
[ প্রা.বি.স.শি. 29-03-2024 ]
তোরাবোরা (Tora Bora) ছিল পূর্ব আফগানিস্তানের নানগারহার প্রদেশের পাহাড়ি অঞ্চলে অবস্থিত একটি গুরুত্বপূর্ণ গুহাময় এলাকা। এটি পাকিস্তানের সীমান্ত ঘেঁষা।
তোরাবোরার তাৎপর্য:
- আল-কায়েদার ঘাঁটি: নব্বইয়ের দশকের শেষভাগ থেকে ২০০১ সালের শেষ পর্যন্ত তোরাবোরা আল-কায়েদা প্রধান ওসামা বিন লাদেন এবং তার অনুসারীদের একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত ছিল। দুর্গম পাহাড়ি এলাকা এবং প্রাকৃতিক গুহা থাকার কারণে এটি তাদের লুকিয়ে থাকার জন্য আদর্শ স্থান ছিল।
- ২০০১ সালের যুদ্ধ: ২০০১ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আফগানিস্তানে হামলার পর তোরাবোরা একটি গুরুত্বপূর্ণ যুদ্ধক্ষেত্রে পরিণত হয়। মার্কিন ও আফগান বাহিনী আল-কায়েদা যোদ্ধাদের হঠানোর জন্য এখানে ব্যাপক অভিযান চালায়। যদিও ওসামা বিন লাদেন সম্ভবত এই অভিযানকালে পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়েছিলেন।
- প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য: তোরাবোরা তার জটিল গুহা ব্যবস্থার জন্য পরিচিত। এই গুহাগুলো স্থানীয়ভাবে নির্মিত এবং প্রাকৃতিক উভয় প্রকারেরই ছিল। এগুলো আল-কায়েদার যোদ্ধাদের আশ্রয়, অস্ত্র ও গোলাবারুদ মজুত এবং যোগাযোগের কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হতো।
- ভূ-রাজনৈতিক গুরুত্ব: আফগানিস্তান-পাকিস্তান সীমান্তের কাছে অবস্থিত হওয়ায় তোরাবোরার একটি কৌশলগত ভূ-রাজনৈতিক গুরুত্বও ছিল।
বর্তমানে তোরাবোরা আল-কায়েদার আর সেই গুরুত্বপূর্ণ ঘাঁটি না থাকলেও, এলাকাটি তার ঐতিহাসিক তাৎপর্যের জন্য পরিচিত।