প্রশ্নঃ মূল্যবোধের উৎস কোনটি?
[ বিসিএস ৪৫তম ]
সঠিক উত্তর: গঃ নৈতিক চেতনা।
মূল্যবোধের উৎস মূলত নৈতিক চেতনার ভিত থেকে সৃষ্টি হয়। নৈতিক চেতনা মানুষের চিন্তা, আদর্শ ও জীবনধারার ভিত্তি গড়ে তোলে, যা সমাজ, ধর্ম, রাষ্ট্র এবং অন্যান্য বাহ্যিক উপাদানের ওপর প্রভাব ফেলে।
তবে সমাজ, ধর্ম ও রাষ্ট্র মূল্যবোধ গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে, কারণ এগুলোর মাধ্যমে নৈতিক চেতনার বিকাশ ঘটে ও সামাজিক জীবনব্যবস্থার সঙ্গে একীভূত হয়।
Related MCQ
প্রশ্নঃ “মানুষ হও এবং মরে বাঁচ।” – এটি কার উক্তি?
[ বিসিএস ৪৬তম ]
"মানুষ হও এবং মরে বাঁচ।" — এটি হেগেল (Georg Wilhelm Friedrich Hegel)-এর উক্তি।
হেগেল এই কথার মাধ্যমে মানুষের আত্মবিকাশ ও আত্মত্যাগের গভীর দর্শন ব্যাখ্যা করেছেন, যেখানে "মৃত্যু" মানে হলো নিজের সংকীর্ণ স্বার্থের মৃত্যু এবং বৃহত্তর সত্য ও ন্যায়ের জন্য বেঁচে থাকা।
প্রশ্নঃ জাতীয় শুদ্ধাচার কৌশল নীতিমালা কত সালে পাশ হয়?
[ বিসিএস ৪৬তম ]
জাতীয় শুদ্ধাচার কৌশল নীতিমালা ২০১২ সালে পাশ হয়।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ এই নীতিমালা অনুমোদন করে। এর মূল লক্ষ্য হলো রাষ্ট্র ও সমাজে শুদ্ধাচার চর্চা এবং দুর্নীতি প্রতিরোধের মাধ্যমে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করা।
প্রশ্নঃ “দর্শন হচ্ছে ধর্ম ও বিজ্ঞানের মধ্যবর্তী এক অনধিকৃত প্রদেশ।” – উক্তিটি কে করেছেন?
[ বিসিএস ৪৬তম ]
“দর্শন হচ্ছে ধর্ম ও বিজ্ঞানের মধ্যবর্তী এক অনধিকৃত প্রদেশ।” – এই উক্তিটি করেছেন বারট্রান্ড রাসেল।
তিনি ছিলেন একজন বিখ্যাত ব্রিটিশ দার্শনিক, যুক্তিবিদ, গণিতবিদ, ইতিহাসবিদ, লেখক, সমাজ সমালোচক এবং শান্তিকর্মী। তাঁর এই উক্তিটি দর্শনের স্বতন্ত্র অবস্থান এবং জ্ঞানার্জনের বিভিন্ন শাখার মধ্যে সম্পর্কের বিষয়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ মন্তব্য।
প্রশ্নঃ ভালো-মন্দ কোন ধরনের মূল্যবোধ?
[ বিসিএস ৪৫তম ]
ভালো-মন্দ হলো নৈতিক মূল্যবোধ (Moral Values)।
নৈতিক মূল্যবোধ সমাজের রীতিনীতি, ন্যায়-অন্যায় বোধ এবং মানুষের আচরণের মানদণ্ড নির্ধারণ করে। ভালো এবং মন্দ এই দুটি ধারণা নৈতিকতার মূল ভিত্তি।
প্রশ্নঃ ‘জ্ঞান হয় পুণ্য’-এই উক্তিটি কার?
[ বিসিএস ৪৫তম ]
‘জ্ঞান হয় পুণ্য’—এই বিখ্যাত উক্তিটি প্রাচীন গ্রিক দার্শনিক সক্রেটিসের।
সক্রেটিস বিশ্বাস করতেন যে মানুষ ভুল করে অজ্ঞতার কারণে। যদি কেউ সত্য ও জ্ঞানের অধিকারী হয়, তবে সে কখনোই অন্যায় কাজ করতে পারে না। তার মতে, জ্ঞানই নৈতিক আচরণের ভিত্তি।
প্রশ্নঃ গণতান্ত্রিক মূল্যবােধের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপাদান-
[ বিসিএস ৪৪তম ]
গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হল ঘঃ পরমতসহিষ্ণুতা।
যদিও অন্যান্য উপাদানগুলোও গণতন্ত্রের জন্য গুরুত্বপূর্ণ, তবে পরমতসহিষ্ণুতা গণতন্ত্রের মূল ভিত্তি স্থাপন করে। এর কারণগুলো হলো:
- বহুমাত্রিকতা ও ভিন্ন মতের স্বীকৃতি: গণতন্ত্রে বিভিন্ন বিশ্বাস, আদর্শ ও মতামতের সহাবস্থান অপরিহার্য। পরমতসহিষ্ণুতা ভিন্ন মতকে সম্মান জানাতে এবং অন্যের দৃষ্টিভঙ্গি বুঝতে সাহায্য করে।
- সহিংসতা পরিহার: পরমতসহিষ্ণুতার অভাবে সমাজে অসহিষ্ণুতা ও সংঘাতের সৃষ্টি হতে পারে। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় শান্তিপূর্ণ উপায়ে মতপার্থক্য মীমাংসার জন্য এই গুণটি অত্যাবশ্যক।
- আলোচনা ও সমঝোতার সুযোগ: পরমতসহিষ্ণুতা থাকলে বিভিন্ন পক্ষ আলোচনার মাধ্যমে একটি সাধারণ সমাধানে পৌঁছাতে পারে। এটি গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে কার্যকর করে তোলে।
- অধিকারের সুরক্ষা: অন্যের মতের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ থাকলে সংখ্যালঘু ও দুর্বল গোষ্ঠীর অধিকারও সুরক্ষিত থাকে।
অন্যান্য বিকল্পগুলোর গুরুত্বও অনস্বীকার্য:
- নেতৃত্বের প্রতি আনুগত্য: প্রশ্নহীন আনুগত্য গণতন্ত্রের পরিপন্থী। গণতান্ত্রিক সমাজে নাগরিকরা যুক্তিসঙ্গত সমালোচনা ও বিকল্প নেতৃত্বের অধিকার রাখে।
- স্বচ্ছ নির্বাচন কমিশন: অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য একটি নিরপেক্ষ ও স্বচ্ছ নির্বাচন কমিশন অত্যাবশ্যক, তবে এটি একটি প্রক্রিয়াগত উপাদান।
- শক্তিশালী রাজনৈতিক দল: শক্তিশালী রাজনৈতিক দল রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও নীতি নির্ধারণে ভূমিকা রাখে, তবে অতিরিক্ত ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত হলে তা গণতন্ত্রের জন্য হুমকি হতে পারে।
পরিশেষে বলা যায়, পরমতসহিষ্ণুতা একটি মানসিক ও সামাজিক গুণ যা গণতন্ত্রের মূল চেতনাকে ধারণ করে এবং অন্যান্য গণতান্ত্রিক উপাদানগুলোর কার্যকর কার্যকারিতা নিশ্চিত করে।
প্রাথমিকভাবে একজন মানুষের মানবীয় গুণাবলি ও সামাজিক মূল্যবোধের বিকাশ ঘটে গঃ পরিবারে।
পরিবার হলো শিশুর প্রথম শিক্ষাঙ্গন। এখানেই শিশুরা ভালোবাসা, সহানুভূতি, সহযোগিতা, সততা, ন্যায়বিচার এবং অন্যের প্রতি শ্রদ্ধাবোধের মতো মৌলিক মানবীয় গুণাবলি ও সামাজিক মূল্যবোধ সম্পর্কে প্রথম ধারণা লাভ করে। মা-বাবা, ভাই-বোন এবং অন্যান্য নিকটাত্মীয়দের আচার-আচরণ ও পারস্পরিক সম্পর্কের মাধ্যমে শিশুরা সামাজিক রীতিনীতি ও মূল্যবোধ সম্পর্কে শেখে।
যদিও সমাজ (ক), বিদ্যালয় (খ), এবং রাষ্ট্রও (ঘ) মানুষের মূল্যবোধ বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে, তবে শৈশবে পরিবারের প্রভাব সবচেয়ে গভীর ও স্থায়ী হয়। বিদ্যালয়ে শিশুরা জ্ঞানার্জনের পাশাপাশি সামাজিক নিয়মকানুন ও মূল্যবোধ সম্পর্কে আরও বিস্তারিতভাবে জানতে পারে। সমাজে মেলামেশার মাধ্যমে তারা বিভিন্ন ধরনের মানুষের সাথে পরিচিত হয় এবং তাদের দৃষ্টিভঙ্গি সম্পর্কে ধারণা লাভ করে। রাষ্ট্রীয় নীতি ও আইনের মাধ্যমেও কিছু মূল্যবোধ সমাজে প্রতিষ্ঠিত হয়।
তবে, একেবারে শুরুতে, যখন একটি শিশুর মন সবচেয়ে বেশি গ্রহণক্ষম থাকে, তখন পরিবারই তাকে মানবীয় গুণাবলি ও সামাজিক মূল্যবোধের বীজ বপন করে। এই প্রাথমিক শিক্ষা ভবিষ্যতের জীবনে তার চরিত্র ও আচরণকে গভীরভাবে প্রভাবিত করে।
প্রশ্নঃ যে গুণের মাধ্যমে মানুষ ‘ভুল’ ও ‘শুদ্ধ’-এর পার্থক্য নির্ধারণ করতে পারে, তা হচ্ছে-
[ বিসিএস ৪৪তম ]
যে গুণের মাধ্যমে মানুষ ‘ভুল’ ও ‘শুদ্ধ’-এর পার্থক্য নির্ধারণ করতে পারে, তা হচ্ছে ঘঃ মূল্যবােধ।
মূল্যবোধ হলো সেই নীতি, আদর্শ বা বিশ্বাস যা একজন ব্যক্তি বা সমাজের কাছে গুরুত্বপূর্ণ এবং যা তাদের আচরণ ও সিদ্ধান্তকে প্রভাবিত করে। মূল্যবোধের মাধ্যমেই মানুষ কোনটা ন্যায়সঙ্গত, কোনটা অন্যায়, কোনটা সঠিক এবং কোনটা ভুল - তা বিচার করতে পারে।
অন্যান্য বিকল্পগুলোও গুরুত্বপূর্ণ, তবে মূল্যবোধের ধারণার অন্তর্ভুক্ত:
- সততা: একটি বিশেষ মূল্যবোধ যা সত্য বলা ও বিশ্বাসযোগ্য হওয়ার ধারণাকে বোঝায়।
- সদাচার: নৈতিক ও ন্যায়সঙ্গত আচরণকে বোঝায়, যা মূল্যবোধ দ্বারা চালিত হয়।
- কর্তব্যবোধ: নির্দিষ্ট দায়িত্ব ও বাধ্যবাধকতা পালনের অনুভূতি, যা মূল্যবোধের অংশ হতে পারে।
মূল্যবোধের ব্যাপক ধারণাই মানুষকে সাধারণভাবে ভুল ও শুদ্ধের পার্থক্য বুঝতে এবং সেই অনুযায়ী আচরণ করতে দিকনির্দেশনা দেয়।
প্রশ্নঃ নৈতিক মূল্যবােধের উৎস কোনটি?
[ বিসিএস ৪৩তম ]
নৈতিক মূল্যবোধ মানুষের জীবনে অনুসরণযোগ্য এমন কিছু আচরণ বিধি, মানুষের জীবন ব্যবস্থা ও জীবন পদ্ধতিকে সঠিক সুন্দর পথে পরিচালনা করে। ধর্মের কল্যাণধর্মী মর্মবাণী অনুসরণ ও অনুকরণের মাধ্যমে মানুষের জীবনে নৈতিক মূল্যবোধের উজ্জ্বল প্রকাশ ঘটে। ধর্ম থেকে উৎসারিত নৈতিক মূল্যবোধ মানুষের নৈতিক চেতনার বিকাশ ঘটায় এবং সমাজ ও রাষ্ট্রের উন্নয়ন - অগ্রগতি সাধন করে।
প্রশ্নঃ বাংলাদেশে কত সালে জাতীয় শুদ্ধাচার কৌশল প্রণয়ন করা হয়?
[ বিসিএস ৪৩তম ]
বাংলাদেশে ২০১২ সালে জাতীয় শুদ্ধাচার কৌশল (National Integrity Strategy - NIS) প্রণয়ন করা হয়। এই কৌশলটির মূল লক্ষ্য হলো বাংলাদেশে দুর্নীতি প্রতিরোধ এবং সুশাসন প্রতিষ্ঠা করা।
প্রশ্নঃ মূল্যবোধের গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হলো-
[ বিসিএস ৪১তম ]
মূল্যবোধের গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্যগুলো হলো:
-
আপেক্ষিকতা (Relativity): মূল্যবোধ স্থান, কাল, সমাজ ও সংস্কৃতিভেদে ভিন্ন ভিন্ন হতে পারে। যা এক সমাজে মূল্যবান বলে বিবেচিত হয়, অন্য সমাজে তা নাও হতে পারে। এমনকি একই সমাজে সময়ের সাথে সাথে মূল্যবোধের পরিবর্তন ঘটতে দেখা যায়।
-
স্থায়িত্ব ও পরিবর্তনশীলতা (Durability and Changeability): মূল্যবোধ সাধারণত দীর্ঘস্থায়ী হয় এবং সহজে পরিবর্তিত হয় না। তবে সময়ের প্রয়োজনে, সামাজিক বিবর্তনে বা নতুন প্রজন্মের প্রভাবে মূল্যবোধের পরিবর্তনও ঘটতে পারে।
-
স্তরায়ণ (Hierarchy): বিভিন্ন মূল্যবোধের মধ্যে একটি অগ্রাধিকারের স্তর বিদ্যমান থাকে। ব্যক্তি বা সমাজ কোন মূল্যবোধকে বেশি গুরুত্ব দেবে, তা পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করে।
-
অভ্যন্তরীণতা (Internality): মূল্যবোধ ব্যক্তি কর্তৃক অর্জিত হয় এবং তার বিশ্বাস ও আচরণের অংশ হয়ে ওঠে। এটি বাহ্যিক চাপ বা আরোপিত বিষয় নয়, বরং ব্যক্তির নিজস্ব উপলব্ধি ও বিবেচনার ফল।
-
দিকনির্দেশনা (Directionality): মূল্যবোধ মানুষের আচরণ ও সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে দিকনির্দেশনা প্রদান করে। কী করা উচিত, কী অনুচিত – এই বিষয়ে মূল্যবোধ একটি মানদণ্ড তৈরি করে।
-
সামাজিক অনুমোদন (Social Approval): সাধারণত, সমাজে প্রচলিত মূল্যবোধগুলো সামাজিক স্বীকৃতি ও সমর্থন লাভ করে। এই মূল্যবোধগুলো মেনে চলার মাধ্যমেই ব্যক্তি সমাজের সাথে সংগতি রক্ষা করে।
-
মানবিক গুণাবলীর পরিচায়ক (Indicator of Human Qualities): মূল্যবোধ মানুষের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য ও মানবিক গুণাবলীকে প্রকাশ করে। সততা, ন্যায়বিচার, সহমর্মিতা ইত্যাদি মূল্যবোধ একজন মানুষের ব্যক্তিত্বকে উন্নত করে।
সংক্ষেপে, মূল্যবোধ আপেক্ষিক, তুলনামূলকভাবে স্থায়ী কিন্তু পরিবর্তনযোগ্য, অগ্রাধিকারভিত্তিক, অভ্যন্তরীণভাবে অর্জিত, আচরণে দিকনির্দেশক, সামাজিকভাবে অনুমোদিত এবং মানবিক গুণাবলীর পরিচায়ক।
প্রশ্নঃ প্লেটো ‘সদগুণৎ বলতে বুঝিয়েছেন-
[ বিসিএস ৪১তম ]
প্লেটো 'সদগুণ' (Virtue) বলতে মূলত জ্ঞানের (Knowledge) কথা বুঝিয়েছেন। তবে তার ধারণায় সদগুণ শুধুমাত্র বুদ্ধিবৃত্তিক জ্ঞান নয়, বরং এটি এক ধরনের ব্যবহারিক জ্ঞান যা মানুষকে সঠিক পথে চালিত করে এবং ন্যায়সঙ্গত কাজ করতে সাহায্য করে।
প্লেটোর মতে, সদগুণ হলো আত্মার সুষম অবস্থা। মানুষের আত্মা তিনটি অংশ নিয়ে গঠিত:
- যুক্তি (Reason): যা জ্ঞান ও প্রজ্ঞার অন্বেষণ করে।
- ইচ্ছা বা স্পৃহা (Spirit): যা সাহস ও দৃঢ়তার উৎস।
- ক্ষুধা বা কামনা (Appetite): যা শারীরিক চাহিদা ও বাসনার সাথে জড়িত।
প্লেটোর মতে, যখন এই তিনটি অংশ সঠিক ভারসাম্যে থাকে এবং যুক্তির দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়, তখনই মানুষের মধ্যে সদগুণ তৈরি হয়।
এছাড়াও, প্লেটো চারটি প্রধান সদগুণের কথা বলেছেন, কার্ডিনাল ভার্চুস (Cardinal Virtues) বলা হয়:
- প্রজ্ঞা (Wisdom): সঠিক জ্ঞান এবং বিচক্ষণতা।
- সাহস (Courage): ভয়কে জয় করার এবং ন্যায়সঙ্গত কাজের জন্য দৃঢ়তা।
- মিতব্যয়িতা (Temperance): নিজের কামনা ও বাসনাকে নিয়ন্ত্রণে রাখা এবং পরিমিত আচরণ করা।
- ন্যায়বিচার (Justice): সমাজের প্রতিটি স্তরে এবং ব্যক্তির আত্মার অভ্যন্তরে সঠিক ভারসাম্য ও সামঞ্জস্য বজায় রাখা।
সুতরাং, প্লেটোর কাছে সদগুণ শুধুমাত্র জ্ঞান নয়, বরং জ্ঞান, আত্মার ভারসাম্য এবং এই চারটি প্রধান গুণের সমন্বিত রূপ যা একটি ভালো ও ন্যায়সঙ্গত জীবন যাপনে সহায়তা করে।
প্রশ্নঃ কোন মূল্যবোধ রাষ্ট্র, সরকার ও গোষ্ঠী কর্তৃক স্বীকৃত?
[ বিসিএস ৪১তম ]
রাষ্ট্র, সরকার ও গোষ্ঠী কর্তৃক স্বীকৃত মূল্যবোধকে সাধারণভাবে সামাজিক মূল্যবোধ বলা যেতে পারে। তবে এর মধ্যে আরও কিছু নির্দিষ্ট ধরনের মূল্যবোধ অন্তর্ভুক্ত থাকে:
- গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ: একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে এই মূল্যবোধগুলো রাষ্ট্র, সরকার এবং বিভিন্ন গোষ্ঠী কর্তৃক স্বীকৃত ও চর্চিত হয়। এর মধ্যে রয়েছে পরমতসহিষ্ণুতা, আইনের শাসন, সাম্য, ভোটাধিকার, মত প্রকাশের স্বাধীনতা, ইত্যাদি।
- নৈতিক মূল্যবোধ: নীতি ও ঔচিত্যবোধ থেকে উৎসারিত এই মূল্যবোধগুলো রাষ্ট্র ও সমাজে সাধারণভাবে স্বীকৃত হয়। যেমন - সততা, ন্যায়বিচার, কর্তব্যপরায়ণতা, সহমর্মিতা ইত্যাদি।
- আইনের শাসন: এটি এমন একটি মূল্যবোধ যা রাষ্ট্র কর্তৃক বিশেষভাবে স্বীকৃত এবং এর মাধ্যমেই সমাজের সকল কার্যক্রম পরিচালিত হয়। সরকার এবং বিভিন্ন গোষ্ঠীও আইনের শাসনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকতে বাধ্য।
- মানবাধিকার: জাতি, ধর্ম, বর্ণ, লিঙ্গ নির্বিশেষে সকল মানুষের মৌলিক অধিকার রাষ্ট্র, সরকার ও আন্তর্জাতিক গোষ্ঠী কর্তৃক স্বীকৃত।
সুতরাং, সামাজিক মূল্যবোধের একটি বৃহত্তর কাঠামোর মধ্যে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ, নৈতিক মূল্যবোধ এবং আইনের শাসনের মতো বিষয়গুলো রাষ্ট্র, সরকার এবং বিভিন্ন গোষ্ঠী কর্তৃক স্বীকৃত হয়ে থাকে।
প্রশ্নঃ মূল্যবোধ দৃঢ় হয়-
[ বিসিএস ৪১তম ]
মূল্যবোধ দৃঢ় হয় প্রধানত শিক্ষার মাধ্যমে।
শিশুকাল থেকেই পরিবার এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে মূল্যবোধের ভিত্তি স্থাপন হয়। বয়স বাড়ার সাথে সাথে কিছু মূল্যবোধ দৃঢ় হয়, কিছু পরিবর্তিত হয় এবং কিছু নতুন মূল্যবোধ অর্জিত হয়।
মূল্যবোধ দৃঢ় হওয়ার ক্ষেত্রে নিম্নলিখিত বিষয়গুলো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে:
- শিক্ষা: সঠিক শিক্ষা মূল্যবোধের জ্ঞান দান করে এবং তা অনুশীলনে উৎসাহিত করে।
- পরিবার: পরিবার হলো মূল্যবোধের প্রথম পাঠশালা। পারিবারিক রীতিনীতি ও ঐতিহ্য মূল্যবোধ গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
- ধর্ম: ধর্মীয় শিক্ষা এবং বিশ্বাস অনেক মূল্যবোধের উৎস হিসেবে কাজ করে।
- সুশাসন: সমাজে ন্যায়বিচার ও সুশাসন প্রতিষ্ঠিত থাকলে মানুষের মধ্যে ইতিবাচক মূল্যবোধ দৃঢ় হয়।
- গণতন্ত্র চর্চা: গণতান্ত্রিক সমাজে অন্যের মতের প্রতি শ্রদ্ধা এবং সহনশীলতার মতো মূল্যবোধগুলো বিকশিত হয়।
- সামাজিক পরিবেশ: সমাজের প্রথা, রীতিনীতি এবং মানুষের পারস্পরিক আচরণ মূল্যবোধকে প্রভাবিত করে।
- ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা: জীবনের বিভিন্ন অভিজ্ঞতা মূল্যবোধকে আরও দৃঢ় বা পরিবর্তন করতে পারে।
প্রশ্নঃ মূল্যবোধের চালিকা শক্তি হলো-
[ বিসিএস ৪০তম ]
মূল্যবোধের চালিকা শক্তি হলো সংস্কৃতি।
সংস্কৃতি হলো একটি সমাজের দীর্ঘদিনের লালিত বিশ্বাস, রীতিনীতি, আচার-আচরণ, জ্ঞান, শিল্পকলা এবং জীবনযাত্রার সামগ্রিক রূপ। মূল্যবোধগুলো এই সংস্কৃতির মধ্য দিয়েই প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে সঞ্চারিত হয় এবং সমাজের সদস্যদের আচরণ ও দৃষ্টিভঙ্গিকে প্রভাবিত করে।
অন্যান্য বিকল্পগুলোও গুরুত্বপূর্ণ হলেও, সংস্কৃতির ভূমিকাই এখানে মুখ্য:
- উন্নয়ন: উন্নয়ন একটি সমাজের অগ্রগতি নির্দেশ করে, তবে এটি মূল্যবোধের সৃষ্টি বা প্রধান চালিকা শক্তি নয়। বরং, উন্নয়নের লক্ষ্য ও পদ্ধতি মূল্যবোধ দ্বারা প্রভাবিত হতে পারে।
- গণতন্ত্র: গণতন্ত্র একটি রাজনৈতিক ব্যবস্থা, যা কিছু মূল্যবোধের (যেমন - স্বাধীনতা, সাম্য) উপর ভিত্তি করে গঠিত হলেও, সকল মূল্যবোধের চালিকা শক্তি নয়।
- সুশাসন: সুশাসন একটি আদর্শ প্রশাসনিক ব্যবস্থা, যা ন্যায়বিচার, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করে। এটি সমাজে কিছু ইতিবাচক মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠায় সহায়ক হলেও, মূল্যবোধের মূল উৎস সংস্কৃতি।
প্রশ্নঃ মূল্যবোধ হলো –
[ বিসিএস ৪০তম ]
মূল্যবোধ হলো সেইসব নীতি, আদর্শ বা বিশ্বাস যা একটি ব্যক্তি, গোষ্ঠী বা সমাজ গুরুত্বপূর্ণ ও মূল্যবান বলে মনে করে এবং যা তাদের আচরণ ও সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে পথনির্দেশক হিসেবে কাজ করে।
সহজভাবে বলতে গেলে, মূল্যবোধ হলো আমাদের কাঙ্ক্ষিত গুণাবলী এবং আমরা জীবনে কী prioritize করি তার একটি প্রতিফলন। এটি ভালো-মন্দ, উচিত-অনুচিত, ন্যায়-অন্যায়ের ধারণা তৈরি করে এবং আমাদের ব্যক্তিগত ও সামাজিক জীবনকে প্রভাবিত করে।
কিছু উদাহরণ:
- ব্যক্তিগত মূল্যবোধ: সততা, ন্যায়পরায়ণতা, সহমর্মিতা, পরিশ্রম, সৃজনশীলতা, স্বাধীনতা।
- সামাজিক মূল্যবোধ: সাম্য, ন্যায়বিচার, সহযোগিতা, সহনশীলতা, দেশপ্রেম, ঐতিহ্য।
মূল্যবোধ স্থান, কাল ও সংস্কৃতিভেদে ভিন্ন হতে পারে, তবে কিছু মৌলিক মূল্যবোধ বিশ্বজনীনভাবে স্বীকৃত।
প্রশ্নঃ নৈরাজ্য যে তত্ত্বের মূল উপাদান সেটি হচ্ছে:
[ বিসিএস ৩৮তম ]
আন্তর্জাতিক সম্পর্কের তত্ত্বে বাস্তববাদ (Realism) এবং এর উপধারা নয়া-বাস্তববাদ (Neo-realism) উভয়ই নৈরাজ্য (Anarchy)-কে আন্তর্জাতিক ব্যবস্থার মূল বৈশিষ্ট্য বা মৌলিক উপাদান হিসেবে দেখে।
বাস্তববাদীরা বিশ্বাস করে যে, আন্তর্জাতিক ব্যবস্থায় কোনো কেন্দ্রীয় বিশ্ব সরকার নেই যা রাষ্ট্রগুলোর উপর কর্তৃত্ব স্থাপন করতে পারে। এই ক্ষমতার অনুপস্থিতিকেই 'নৈরাজ্য' বলা হয়। এই নৈরাজ্যপূর্ণ পরিবেশে রাষ্ট্রগুলো তাদের নিজস্ব নিরাপত্তা ও টিকে থাকাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয় এবং ক্ষমতার ভারসাম্য বজায় রাখার চেষ্টা করে।
অন্যান্য বিকল্পগুলো:
- নয়া উদারতাবাদ (Neoliberalism): এটি সহযোগিতা এবং আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে গুরুত্ব দেয়, যদিও নৈরাজ্যের অস্তিত্বকে অস্বীকার করে না, তবে বাস্তববাদীরা যতটা করে, ততটা মৌলিক উপাদান হিসেবে দেখে না।
- গঠনবাদ (Constructivism): এটি সামাজিক গঠন এবং ধারণা (ideas) ও নিয়মের (norms) ভূমিকাকে গুরুত্ব দেয়। এটি নৈরাজ্যকে 'কীভাবে রাষ্ট্রগুলো এটিকে উপলব্ধি করে' তার উপর নির্ভরশীল বলে মনে করে, মৌলিক কাঠামোগত বৈশিষ্ট্য হিসেবে নয়।
- নব্য মার্কসবাদ (Neo-Marxism): এটি বিশ্ব অর্থনীতির শ্রেণিবিন্যাস এবং পুঁজিবাদের প্রভাবকে গুরুত্ব দেয়, যেখানে রাষ্ট্রগুলো এই অর্থনৈতিক কাঠামোর অধীন।
প্রশ্নঃ গোল্ডেন মিন (Golden Mean) হলো—
[ বিসিএস ৩৮তম ]
"গোল্ডেন মিন" (Golden Mean) হলো একটি দার্শনিক ধারণা, যা মূলত প্রাচীন গ্রিক দার্শনিক এরিস্টটল প্রবর্তন করেছিলেন।
এর মূল অর্থ হলো: দুটি চরম পন্থার (মতবাদের) মধ্যবর্তী অবস্থান বা ভারসাম্যপূর্ণ অবস্থা।
এরিস্টটলের মতে, নৈতিক গুণাবলী (moral virtues) হলো দুটি চরম অবস্থার (একটি হলো অতি প্রাচুর্য বা বাড়াবাড়ি, অন্যটি হলো অভাব বা ঘাটতি) মধ্যবর্তী একটি সুষম অবস্থা। যেমন:
- সাহস (Courage): এটি ভীরুতা (cowardice) এবং বেপরোয়া সাহসিকতা (recklessness) - এই দুটি চরম অবস্থার মধ্যবর্তী একটি গুণ।
- উদারতা (Generosity): এটি অপচয় (extravagance) এবং কৃপণতা (stinginess) - এই দুই চরম অবস্থার মধ্যবর্তী।
- আত্মসম্মান (Self-respect): এটি অহংকার (arrogance) এবং আত্ম-অবনতি (self-deprecation) - এর মধ্যবর্তী।
সুতরাং, গোল্ডেন মিন হলো এমন একটি ধারণা যেখানে কোনো কাজ বা গুণের ক্ষেত্রে বাড়াবাড়ি বা ঘাটতি না করে একটি ভারসাম্যপূর্ণ ও সঠিক মধ্যম পন্থা অবলম্বন করা হয়। এটি নৈতিকতার ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ ধারণা।
প্রশ্নঃ ব্যক্তি সহনশীলতার শিক্ষা লাভ করে-
[ বিসিএস ৩৮তম ]
ব্যক্তি সহনশীলতার শিক্ষা লাভ করে মূলত মূল্যবোধের শিক্ষা থেকে।
- মূল্যবোধ (Values) হলো আমাদের বিশ্বাস, আদর্শ এবং নীতি যা আমাদের আচরণ, সিদ্ধান্ত এবং বিশ্বকে দেখার ভঙ্গি তৈরি করে। সহনশীলতা (tolerance) এই মূল্যবোধের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। যখন একজন ব্যক্তি বৈচিত্র্যকে সম্মান করতে, ভিন্ন মতামতকে গ্রহণ করতে এবং শান্তিপূর্ণভাবে ভিন্নতাগুলোকে মোকাবেলা করতে শেখে, তখন সে আসলে সহনশীলতার মূল্যবোধ অর্জন করে।
অন্যান্য বিকল্পগুলো প্রাসঙ্গিক হলেও ততটা সরাসরি নয়:
- সুশাসনের শিক্ষা থেকে: সুশাসন সহনশীলতাকে উৎসাহিত করে, কিন্তু সহনশীলতার মূল ভিত্তি হলো মূল্যবোধ।
- আইনের শিক্ষা থেকে: আইন মানুষকে কিছু কাজ থেকে বিরত রাখে বা বাধ্য করে, কিন্তু সহনশীলতা একটি অভ্যন্তরীণ গুণ যা আইনি বাধ্যবাধকতার চেয়ে গভীর।
- কর্তব্যবোধ থেকে: কর্তব্যবোধ একটি বিশেষ ধরনের মূল্যবোধ যা সহনশীলতার জন্য সহায়ক হতে পারে, তবে সহনশীলতা তার চেয়েও ব্যাপক।
সুতরাং, সহনশীলতা একটি ব্যক্তিগত গুণ যা মূল্যবোধের শিক্ষার মাধ্যমেই বিকশিত হয়।
প্রশ্নঃ মূল্যবোধ পরীক্ষা করে-
[ বিসিএস ৩৮তম ]
মূল্যবোধ (Values) মানুষের আচরণ, বিশ্বাস এবং সিদ্ধান্তকে পরিচালিত করে। এটি মূলত একটি মানদণ্ড যার সাহায্যে আমরা বিভিন্ন বিষয়কে বিচার করি।
মূল্যবোধ যা পরীক্ষা করে তা হলো:
- ভাল ও মন্দ (Good and Bad): মূল্যবোধ আমাদের শেখায় কোনটি করা উচিত এবং কোনটি করা উচিত নয়, কোনটি ইতিবাচক এবং কোনটি নেতিবাচক।
- ন্যায় ও অন্যায় (Right and Wrong): এটি সামাজিক ও ব্যক্তিগত স্তরে কোনো কাজ বা সিদ্ধান্তের ন্যায্যতা বিচার করতে সাহায্য করে।
- নৈতিকতা ও অনৈতিকতা (Ethical and Unethical): মূল্যবোধ আমাদের নৈতিক বিচারবোধ তৈরি করে, যা আমাদের সঠিক নৈতিক পথ বেছে নিতে সাহায্য করে।
সুতরাং, মূল্যবোধ এই সবগুলো বিষয়কেই পরীক্ষা করে এবং এই তিনটির মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই। তারা একই ধারণার বিভিন্ন দিক।
অতএব, সঠিক উত্তর হলো ঘঃ উপরের সবগুলো।
প্রশ্নঃ সরকারি সিদ্ধান্ত প্রণয়নে কোন মূল্যবোধটি গুরুত্বপূর্ণ নয়?
[ বিসিএস ৩৭তম ]
সরকারি সিদ্ধান্ত প্রণয়নে নিম্নলিখিত মূল্যবোধগুলির মধ্যে সৃজনশীলতা ততটা গুরুত্বপূর্ণ নয়, যতটা অন্যান্যগুলো।
ব্যাখ্যা:
-
কঃ বিশ্বস্ততা (Trustworthiness): সরকারি সিদ্ধান্তে বিশ্বস্ততা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। জনগণ যেন সরকারের ওপর আস্থা রাখতে পারে এবং সরকারি সিদ্ধান্তগুলো নির্ভরযোগ্য হয়, সে জন্য এটি অপরিহার্য।
-
গঃ নিরপেক্ষতা (Impartiality): সিদ্ধান্ত প্রণয়নে নিরপেক্ষতা অত্যাবশ্যক। পক্ষপাতহীন সিদ্ধান্ত সকলের জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিত করে এবং সুশাসন প্রতিষ্ঠা করে।
-
ঘঃ জবাবদিহিতা (Accountability): সরকারি সিদ্ধান্তের জন্য জবাবদিহিতা একটি মৌলিক মূল্যবোধ। এর মাধ্যমে সিদ্ধান্ত গ্রহণকারীরা তাদের কাজের জন্য দায়বদ্ধ থাকেন এবং স্বচ্ছতা নিশ্চিত হয়।
-
খঃ সৃজনশীলতা (Creativity): সৃজনশীলতা নতুন ধারণা বা সমাধানের জন্য সহায়ক হতে পারে এবং নীতি নির্ধারণ বা সমস্যা সমাধানে এর ভূমিকা থাকতে পারে। তবে, এটি সিদ্ধান্ত প্রণয়নের মৌলিক মূল্যবোধ হিসাবে বিশ্বস্ততা, নিরপেক্ষতা বা জবাবদিহিতার মতো সরাসরি গুরুত্বপূর্ণ নয়। সরকারি সিদ্ধান্ত প্রায়শই আইন, নিয়ম, প্রবিধান এবং বিদ্যমান নীতির কাঠামোর মধ্যে থেকে নেওয়া হয়, যেখানে সৃজনশীলতার চেয়ে সঠিকতা, ধারাবাহিকতা এবং ন্যায়পরায়ণতা বেশি গুরুত্বপূর্ণ। অতিরিক্ত সৃজনশীলতা কখনো কখনো প্রটোকল বা প্রতিষ্ঠিত মান থেকে বিচ্যুতি ঘটাতে পারে।
সুতরাং, বিশ্বস্ততা, নিরপেক্ষতা এবং জবাবদিহিতা হলো সরকারি সিদ্ধান্ত প্রণয়নের জন্য অপরিহার্য মৌলিক মূল্যবোধ, যেখানে সৃজনশীলতা একটি সহায়ক গুণ হলেও সরাসরি সিদ্ধান্তের মূল স্তম্ভ নয়।
প্রশ্নঃ শিশুর মনস্তাত্ত্বিক চাহিদা পূরণে নিচের কোনটি জরুরি?
[ বিসিএস ৩৬তম ]
শিশুর মনস্তাত্ত্বিক চাহিদা পূরণে উল্লেখিত সবকটিই জরুরি।
আসুন প্রতিটি বিষয় কেন জরুরি তা সংক্ষেপে দেখি:
-
স্বীকৃতি: শিশুরা যখন তাদের কাজ বা প্রচেষ্টার জন্য প্রশংসা ও স্বীকৃতি পায়, তখন তাদের আত্মবিশ্বাস বাড়ে এবং তারা অনুভব করে যে তাদের মূল্য আছে। এটি তাদের আত্মমর্যাদা বিকাশে সহায়তা করে।
-
স্নেহ: ভালোবাসা, মমতা এবং নিরাপদ পরিবেশ শিশুদের মানসিক বিকাশের জন্য অপরিহার্য। স্নেহ শিশুদের মানসিক স্থিতিশীলতা দেয় এবং তাদের মধ্যে বিশ্বাস ও নিরাপত্তার অনুভূতি তৈরি করে।
-
সাফল্য: শিশুরা যখন কোনো কাজে সফল হয়, তখন তাদের মধ্যে সক্ষমতার অনুভূতি জন্মায়। এটি তাদের শেখার আগ্রহ বাড়ায় এবং নতুন চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় উৎসাহিত করে।
এই তিনটি উপাদানই একে অপরের পরিপূরক এবং একটি শিশুর সামগ্রিক মানসিক সুস্থতা ও সুস্থ বিকাশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
প্রশ্নঃ ব্যক্তিগত মূল্যবোধ লালন করে–
[ বিসিএস ৩৬তম ]
ব্যক্তিগত মূল্যবোধ হলো ব্যক্তির স্বতন্ত্র মূল্যবোধ। এই মূল্যবোধে ব্যক্তির স্বাধীনতাকে পালন করা হয়। যদিও নির্দিষ্ট কোনো গোষ্ঠী, সংস্কৃতি, ধর্ম, রাজনৈতিক দল, পরিবার, বন্ধু-বান্ধব, জাতীয়তা, ইতিহাস প্রভৃতি ব্যক্তিগত মূল্যবোধ গঠনে সাহায্য করে। তথাপি সময়ের পরিবর্তনের সাথে সাথে নিজস্ব অর্জিত জ্ঞান ও দৃষ্টিভঙ্গির উপর ভিত্তি করে ব্যক্তিগত মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠা লাভ করে। যেখানে অন্যান্য মূল্যবোধ থেকে ব্যক্তিগত মূল্যবোধের প্রধান পার্থক্য হলো ব্যক্তির স্বাধীনতা বা স্বকীয়তা। তাই সমাজের এক এক ব্যক্তির মূল্যবোধ এক এক রকম।
প্রশ্নঃ মূল্যবোধ শিক্ষার অন্যতম লক্ষ্য হচ্ছে–
[ বিসিএস ৩৬তম ]
মূল্যবোধ শিক্ষার অন্যতম লক্ষ্য হচ্ছে সামাজিক অবক্ষয় রোধ করা
ব্যাখ্যা: মূল্যবোধ শিক্ষার অন্যতম প্রধান লক্ষ্য হলো সমাজে নৈতিকতা, সততা, দায়িত্বশীলতা এবং সামাজিক সংহতি বৃদ্ধি করা। এর মাধ্যমে সামাজিক অবক্ষয়, যেমন - দুর্নীতি, অন্যায়, বিশৃঙ্খলা ইত্যাদি রোধ করা সম্ভব হয়। অন্যান্য বিকল্পগুলো (দুর্নীতি রোধ, রাজনৈতিক অবক্ষয় রোধ) সামাজিক অবক্ষয় রোধের বৃহত্তর লক্ষ্যেরই অংশ।
প্রশ্নঃ একজন জনপ্রশাসকের মৌলিক মূল্যবোধ হলো-
[ বিসিএস ৩৬তম ]
একজন জনপ্রশাসকের মৌলিক মূল্যবোধ হলো: জনকল্যাণ।
ব্যাখ্যা: একজন জনপ্রশাসকের মূল উদ্দেশ্য এবং মৌলিক মূল্যবোধ হলো জনগণের সেবা করা এবং তাদের কল্যাণ সাধন করা। কর্মদক্ষতা, স্বাধীনতা বা ক্ষমতা—এগুলো সবই জনকল্যাণ নিশ্চিত করার জন্য প্রয়োজনীয় হাতিয়ার বা গুণাবলী, কিন্তু চূড়ান্ত লক্ষ্য হলো জনগণের মঙ্গল।
প্রশ্নঃ মূল্যবোধ (Values) কী?
[ বিসিএস ৩৫তম ]
সঠিক উত্তর হলো কঃ মানুষের আচরণ পরিচালনাকারী নীতি ও মানদণ্ড।
মূল্যবোধ হলো এমন কিছু বিশ্বাস, নীতি বা মানদণ্ড যা একজন ব্যক্তি বা একটি সমাজের জন্য গুরুত্বপূর্ণ এবং যা মানুষের আচরণ, সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও জীবনের উদ্দেশ্যকে পরিচালিত করে। এগুলো কী সঠিক, কী ভালো, কী আকাঙ্ক্ষিত, তা নির্ধারণে সাহায্য করে।
প্রশ্নঃ সামাজিক মূল্যবোধের ভিত্তি কী?
[ বিসিএস ৩৫তম ]
সামাজিক মূল্যবোধের ভিত্তি হলো এমন সব মৌলিক উপাদান যা একটি সমাজের রীতিনীতি, আচরণ এবং কাঠামোকে ধারণ করে ও পরিচালিত করে। এই উপাদানগুলো একে অপরের সাথে সম্পর্কযুক্ত এবং সম্মিলিতভাবে সামাজিক মূল্যবোধকে শক্তিশালী করে।
- কঃ আইনের শাসন: আইনের শাসন হলো একটি সমাজের ভিত্তি, যা সকল নাগরিকের জন্য সমান অধিকার ও ন্যায়বিচার নিশ্চিত করে। এটি সামাজিক শৃঙ্খলা ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে সাহায্য করে, যা সুস্থ মূল্যবোধ বিকাশের জন্য অপরিহার্য।
- খঃ নৈতিকতা: নৈতিকতা হলো ভালো-মন্দের ধারণা এবং মানুষের আচরণকে পরিচালিত করার মূলনীতি। সামাজিক মূল্যবোধের গভীরে নৈতিকতা নিহিত, কারণ নৈতিকতার ভিত্তিতেই একটি সমাজ কী সঠিক এবং কী ভুল তা নির্ধারণ করে।
- গঃ সাম্য: সাম্য বা সমতা হলো সমাজের প্রতিটি সদস্যের জন্য সমান সুযোগ ও মর্যাদার ধারণা। একটি সমাজে সাম্য প্রতিষ্ঠা হলে সেখানে অন্তর্ভুক্তিমূলক মূল্যবোধ গড়ে ওঠে এবং বৈষম্য কমে আসে।
এই তিনটি উপাদানই সামাজিক মূল্যবোধের অবিচ্ছেদ্য অংশ। আইনের শাসন সমাজের শৃঙ্খলা বজায় রাখে, নৈতিকতা মানুষের আচরণকে সঠিক পথে পরিচালিত করে এবং সাম্য সকলের প্রতি ন্যায় ও সুবিচার নিশ্চিত করে। এই সবগুলো মিলেই একটি শক্তিশালী সামাজিক মূল্যবোধের ভিত্তি তৈরি হয়।
সুতরাং, সঠিক উত্তর হলো ঘঃ উপরের সবগুলো।
প্রশ্নঃ ইদানীং আপনার মনে হচ্ছে সংসারে আপনার গুরুত্ব হ্রাস পাচ্ছে। আপনি এমন অবস্থায় -
[ বিসিএস ৩৪তম ]