প্রশ্নঃ বাংলাদেশে ‘গ্রাম থিয়েটার’-এর প্রবর্তক কে?
[ বিসিএস ৩৭তম ]
বাংলাদেশে 'গ্রাম থিয়েটার' একটি গুরুত্বপূর্ণ নাট্য আন্দোলন, যা গ্রামীণ সংস্কৃতি ও নাট্যচর্চাকে পুনরুজ্জীবিত করার লক্ষ্যে শুরু হয়েছিল।
এর প্রধান দিকগুলো হলো:
-
প্রতিষ্ঠাতা ও স্বপ্নদ্রষ্টা: বাংলাদেশে গ্রাম থিয়েটার আন্দোলনের স্বপ্নদ্রষ্টা হলেন নাট্যাচার্য সেলিম আল দীন। তার সাথে নাসির উদ্দীন ইউসুফও এর অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা।
-
প্রতিষ্ঠা: ২০ জানুয়ারি ১৯৮২ সালে (৬ মাঘ ১৩৮৮ বঙ্গাব্দ) ঢাকা থিয়েটারের তত্ত্বাবধানে মানিকগঞ্জ জেলার দৌলতপুর উপজেলার তালুকনগর গ্রামে 'বাংলাদেশ গ্রাম থিয়েটার' যাত্রা শুরু করে। তালুকনগর গ্রামের শাহ আজহার ওরফে আজাহার বয়াতীর মাঘী মেলাকে কেন্দ্র করে এর কার্যক্রম শুরু হয়েছিল।
-
উদ্দেশ্য ও দর্শন: গ্রাম থিয়েটারের মূল উদ্দেশ্য ছিল বাংলার ঐতিহ্যবাহী নাট্যরীতি ও পরিবেশনাকে নাগরিক মঞ্চের বাইরে এনে গ্রামের মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়া এবং গ্রামীণ সমাজের নিজস্ব জীবন, সংস্কৃতি ও সমস্যা নিয়ে নাটক তৈরি ও পরিবেশন করা। এর মূলনীতি হলো "হাতের মুঠোয় হাজার বছর আমরা চলেছি সামনে"। এটি নাগরিক ও গ্রামীণ সংস্কৃতির ব্যবধান ঘোচাতে চেয়েছিল এবং ঐতিহ্যবাহী নাট্য আঙ্গিকগুলোকে আধুনিক জীবনে উপযোগী করে তুলতে চেয়েছিল।
-
বৈশিষ্ট্য:
- বর্ণনাত্মক নাট্যরীতি: ঢাকা থিয়েটার ও বাংলাদেশ গ্রাম থিয়েটার বর্ণনাত্মক নাট্যরীতি ও বর্ণনাত্মক অভিনয় রীতি উদ্ভাবন ও প্রচলনে ভূমিকা রাখে।
- খোলা মঞ্চ: বৃত্তাকার ও চৌকোণ খোলা মঞ্চের পুনঃপ্রতিষ্ঠা ছিল এর একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক।
- গ্রামীণ কর্মী সৃষ্টি: গ্রামীণ নাট্যকর্মী তৈরি করা এবং গ্রামে গ্রামে গ্রাম থিয়েটার সংগঠন গড়ে তোলার উপর জোর দেওয়া হয়।
-
প্রভাব: গ্রাম থিয়েটার আন্দোলন বাংলাদেশের নাট্যচর্চায় একটি নতুন মাত্রা যোগ করেছে এবং গ্রামীণ জনপদে নাটকের প্রতি আগ্রহ বৃদ্ধিতে সহায়ক হয়েছে। এটি শুধু বিনোদন নয়, সমাজ পরিবর্তনের হাতিয়ার হিসেবেও কাজ করেছে। সেলিম আল দীনের অনেক নাটক, যেমন 'কিত্তনখোলা', এই গ্রাম থিয়েটার আন্দোলনের দর্শনের সাথে সম্পর্কিত।
সংক্ষেপে, বাংলাদেশে গ্রাম থিয়েটার সেলিম আল দীন ও নাসির উদ্দীন ইউসুফের নেতৃত্বে গঠিত একটি আন্দোলন যা গ্রামীণ নাট্যচর্চা এবং বাঙালির নিজস্ব নাট্যশৈলীকে নতুন করে সংজ্ঞায়িত করেছে।