আমাদের স্কুল

সেটিং

বহুনির্বাচনি প্রশ্নের দেখানোর অপশনঃ
শুধুমাত্র উত্তর 2 অপশন
3 অপশন 4 অপশন
বহুনির্বাচনি প্রশ্নের অপশন প্রদর্শনঃ
রো আকারে কলাম আকারে
বহুনির্বাচনি প্রশ্নের উত্তরঃ
লুকান বোল্ড করুন
দেখান দেখান ও বোল্ড করুন
বহুনির্বাচনি প্রশ্নের ব্যাখ্যাঃ
দেখান লুকান নিচে লুকান
থিম নির্বাচন করুনঃ
ফন্ট সাইজঃ
15

প্রশ্নঃ চাকমা জনগোষ্ঠীর লোকসংখ্যা সর্বাধিক

[ বিসিএস ৩৮তম ]

ক. রাঙ্গামাটি জেলায়
খ. খাগড়াছড়ি জেলায়
গ. বান্দরবান জেলায়
ঘ. সিলেট জেলায়
উত্তরঃ রাঙ্গামাটি জেলায়
ব্যাখ্যাঃ

চাকমা জনগোষ্ঠী বাংলাদেশের বৃহত্তম আদিবাসী সম্প্রদায় এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলের একটি প্রধান নৃগোষ্ঠী। তাদের জীবনযাপন, সংস্কৃতি, ভাষা, এবং ইতিহাস অত্যন্ত সমৃদ্ধ ও বৈচিত্র্যপূর্ণ।

১. অবস্থান ও জনসংখ্যা:

  • অবস্থান: বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চল (রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি, বান্দরবান জেলা) হলো চাকমাদের প্রধান আবাসস্থল। তবে, রাঙ্গামাটি জেলায় তাদের জনসংখ্যা সর্বাধিক। এছাড়া, ভারতের ত্রিপুরা ও মিজোরাম রাজ্য এবং মায়ানমারের আরাকান (রাখাইন) প্রদেশেও চাকমাদের বসবাস রয়েছে।
  • জনসংখ্যা: বাংলাদেশে মোট আদিবাসী জনগোষ্ঠীর মধ্যে চাকমাদের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি।

২. ভাষা ও সাহিত্য:

  • ভাষা: চাকমাদের নিজস্ব ভাষা আছে, যার নাম চাকমা ভাষা। এই ভাষা ইন্দো-আর্য ভাষা পরিবারের অন্তর্ভুক্ত এবং এর নিজস্ব বর্ণমালা রয়েছে, যা 'চাকমা লিপি' বা 'আঝা পাথা' নামে পরিচিত। এই লিপির সাথে বাংলা, পালি ও মিয়ানমারের কিছু লিপির মিল রয়েছে।
  • সাহিত্য: চাকমা ভাষায় সমৃদ্ধ লোকসাহিত্য, লোকগান, রূপকথা, প্রবাদ-প্রবচন এবং আধুনিক সাহিত্য রয়েছে। তাদের গান 'গেংখুলী' নামে পরিচিত।

৩. ধর্ম:

  • ধর্ম: চাকমা জনগোষ্ঠীর সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী (থেরবাদ বৌদ্ধধর্ম)। তাদের ধর্মীয় উৎসবগুলোর মধ্যে বুদ্ধ পূর্ণিমা, প্রবারণা পূর্ণিমা (কঠিন চীবর দান) অন্যতম।

৪. সমাজ ও সংস্কৃতি:

  • সামাজিক ব্যবস্থা: চাকমা সমাজে 'গোজা' বা 'গোত্র' প্রথা প্রচলিত। প্রতিটি গোজার নিজস্ব প্রধান থাকে। তাদের সমাজ পিতৃতান্ত্রিক।
  • গ্রাম সংগঠন: প্রতিটি চাকমা গ্রাম 'আদাং' বা 'গাঁও' নামে পরিচিত, যার প্রধানকে 'কার্বারী' বলা হয়। কয়েকটি গ্রাম মিলে 'মৌজা' গঠিত হয় এবং মৌজার প্রধানকে 'হেডম্যান' বলা হয়। চাকমা সমাজের সর্বোচ্চ প্রধান হলেন 'চাকমা রাজা'।
  • পোশাক: চাকমা নারীদের ঐতিহ্যবাহী পোশাক হলো 'পিনন' ও 'হাদি'। পিনন হলো এক ধরনের লুঙ্গির মতো নিচের অংশের পোশাক, আর হাদি হলো ব্লাউজের মতো উপরের অংশের পোশাক। পুরুষরা সাধারণত লুঙ্গি ও শার্ট পরেন।
  • উৎসব: চাকমাদের প্রধান উৎসব হলো 'বিজু'। এটি বাংলা নববর্ষের সময় তিন দিন ধরে উদযাপিত হয় (মূল বিজু, ফুল বিজু, গড়িয়া বিজু বা বৈসুক)। এটি তাদের সবচেয়ে বড় সামাজিক ও সাংস্কৃতিক উৎসব। এছাড়া তারা বৌদ্ধ ধর্মের বিভিন্ন উৎসবও পালন করে।
  • খাদ্য: ভাত তাদের প্রধান খাদ্য। এছাড়া মাছ, মাংস, এবং বিভিন্ন পাহাড়ি শাকসবজি খায়। 'সিদল' (এক প্রকার শুঁটকি মাছের ভর্তা) তাদের জনপ্রিয় খাবার।

৫. অর্থনীতি ও জীবিকা:

  • কৃষি: চাকমাদের প্রধান জীবিকা হলো জুম চাষ। তারা পাহাড়ের ঢালে জুম পদ্ধতিতে ধান, ভুট্টা, মারফা, আদা, হলুদ, তুলা ইত্যাদি ফসল ফলিয়ে থাকে।
  • অন্যান্য: বর্তমানে অনেকেই আধুনিক কৃষিপদ্ধতি, ব্যবসা, সরকারি-বেসরকারি চাকরি এবং বিভিন্ন পেশায় জড়িত হচ্ছে।

৬. ইতিহাস: চাকমারা দীর্ঘকাল ধরে পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাস করছে এবং তাদের একটি সমৃদ্ধ ইতিহাস রয়েছে। তারা একসময় স্বাধীন রাজা দ্বারা শাসিত ছিল। ব্রিটিশ শাসনামলে এবং পরবর্তীতে পাকিস্তান ও বাংলাদেশ আমলে তাদের জীবনযাত্রায় অনেক পরিবর্তন এসেছে। ১৯৭২ সালের সংবিধানে আদিবাসীদের স্বীকৃতি না পাওয়ায় তারা নিজেদের স্বতন্ত্র অস্তিত্ব ও অধিকারের জন্য সংগ্রাম করে আসছে। পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তি চুক্তির মাধ্যমে তাদের অধিকার ও স্বায়ত্তশাসনের একটি ভিত্তি তৈরি হয়েছে।

চাকমা জনগোষ্ঠী তাদের নিজস্ব সংস্কৃতি, ঐতিহ্য এবং জীবনধারার কারণে বাংলাদেশের একটি অনন্য ও মূল্যবান অংশ।