ব্যাখ্যাঃ
IAEA-এর পূর্ণরূপ হলো International Atomic Energy Agency বা আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থা। এটি জাতিসংঘের অধীনে একটি স্বায়ত্তশাসিত আন্তর্জাতিক সংস্থা, যা পরমাণু শক্তির শান্তিপূর্ণ ব্যবহারকে উৎসাহিত করে এবং সামরিক উদ্দেশ্যে এর ব্যবহার (বিশেষ করে পারমাণবিক অস্ত্রের বিস্তার) প্রতিরোধে কাজ করে।
প্রতিষ্ঠার পটভূমি:
১৯৫৩ সালে তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোয়াইট ডি. আইজেনহাওয়ার জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে "এটমস ফর পিস" (Atoms for Peace) প্রস্তাব উত্থাপন করেন। এর উদ্দেশ্য ছিল পারমাণবিক প্রযুক্তির ধ্বংসাত্মক দিক নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি এর শান্তিপূর্ণ ব্যবহারকে উৎসাহিত করা। এই ধারণার ভিত্তিতেই ১৯৫৭ সালের ২৯ জুলাই IAEA প্রতিষ্ঠিত হয়।
সদর দপ্তর:
IAEA-এর সদর দপ্তর অস্ট্রিয়ার ভিয়েনায় অবস্থিত।
মূল কাজ ও উদ্দেশ্য:
IAEA-এর প্রধান কাজগুলো তিনটি স্তম্ভের ওপর দাঁড়িয়ে আছে, যেগুলোকে প্রায়শই "থ্রি পিলারস" বলা হয়:
১. নিরাপত্তা ও যাচাই (Safeguards and Verification):
- এটি IAEA-এর সবচেয়ে পরিচিত কাজ। সংস্থাটি পারমাণবিক প্রযুক্তি ও সরঞ্জাম যাতে সামরিক উদ্দেশ্যে, বিশেষ করে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরিতে ব্যবহৃত না হয়, তা নিশ্চিত করার জন্য সদস্য রাষ্ট্রগুলোর পারমাণবিক কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ ও যাচাই করে (যেমন: পরিদর্শন, তথ্য বিশ্লেষণ)।
- পারমাণবিক অস্ত্র বিস্তার রোধ চুক্তি (Non-Proliferation Treaty - NPT) বাস্তবায়নে IAEA একটি মূল ভূমিকা পালন করে।
২. নিরাপত্তা ও সুরক্ষা (Safety and Security):
- পারমাণবিক স্থাপনা এবং তেজস্ক্রিয় পদার্থের নিরাপদ ব্যবহার নিশ্চিত করা।
- পারমাণবিক দুর্ঘটনার ঝুঁকি কমানো এবং এমন দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা ও প্রতিক্রিয়া ব্যবস্থা উন্নত করা।
- পারমাণবিক নিরাপত্তা মানদণ্ড তৈরি ও প্রয়োগে সদস্য রাষ্ট্রগুলোকে সহায়তা করা।
৩. পারমাণবিক প্রযুক্তির শান্তিপূর্ণ প্রয়োগ (Peaceful Applications of Nuclear Technology):
- সদস্য রাষ্ট্রগুলোকে, বিশেষ করে উন্নয়নশীল দেশগুলোকে, স্বাস্থ্য, কৃষি, পানি ব্যবস্থাপনা, শিল্প এবং জ্বালানি উৎপাদন (যেমন: পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র) সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে পারমাণবিক প্রযুক্তির শান্তিপূর্ণ ব্যবহার ও উন্নয়নে সহায়তা করা।
- পারমাণবিক প্রযুক্তি ও জ্ঞান বিনিময়ের জন্য একটি প্ল্যাটফর্ম সরবরাহ করা।
অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ তথ্য:
- সদস্য সংখ্যা: বর্তমানে IAEA-এর সদস্য সংখ্যা ১৭৮টি (এপ্রিল, ২০২৪ পর্যন্ত তথ্য অনুযায়ী)।
- নোবেল শান্তি পুরস্কার: ২০০৫ সালে IAEA এবং এর তৎকালীন মহাপরিচালক মোহাম্মদ এলবারাদেই (Mohamed ElBaradei) যৌথভাবে পারমাণবিক অস্ত্রের বিস্তার রোধে তাদের প্রচেষ্টার জন্য নোবেল শান্তি পুরস্কার লাভ করেন।
সংক্ষেপে, IAEA বিশ্বব্যাপী পারমাণবিক শক্তির নিরাপদ, সুরক্ষিত ও শান্তিপূর্ণ ব্যবহার নিশ্চিত করার জন্য কাজ করে, যাতে মানবজাতির কল্যাণে এর সম্ভাবনাকে কাজে লাগানো যায় এবং এর ধ্বংসাত্মক অপব্যবহার রোধ করা যায়।