‘অর্ধচন্দ্র’ কথাটির অর্থ খঃ গলাধাক্কা দেওয়া।

বাংলায় ‘অর্ধচন্দ্র দেওয়া’ একটি বাগধারা, যার অর্থ হলো ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বের করে দেওয়া বা বিদায় করা।

অন্যান্য বিকল্পগুলোর অর্থ:

• কঃ অমাবস্যা: চাঁদের কৃষ্ণপক্ষ বা যখন চাঁদ দেখা যায় না।
• গঃ কাছে টানা: আকর্ষণ করা বা নিকটে আনা।
• ঘঃ কাস্তে: ধান বা ঘাস কাটার জন্য ব্যবহৃত বাঁকানো লোহার ফলাযুক্ত হাতলবিশিষ্ট কৃষি সরঞ্জাম।

‘ইতরবিশেষ’ বলতে বােঝায় গঃ পার্থক্য।

‘ইতর’ শব্দের অর্থ হলো অন্য, ভিন্ন বা সাধারণ এবং ‘বিশেষ’ মানে পার্থক্য বা বৈশিষ্ট্য। সুতরাং, ‘ইতরবিশেষ’ অর্থ হলো ভেদাভেদ, পার্থক্য বা কমবেশি।

‘গড্ডলিকা প্রবাহ’ বাগধারায় ‘গড্ডল’ শব্দের অর্থ খঃ ভেড়া।

‘গড্ডলিকা প্রবাহ’ বাগধারাটির অর্থ হলো অন্ধ অনুকরণ বা স্রোতের গা ভাসিয়ে চলা। ভেড়া যেমন পালের অন্য ভেড়ার অনুসরণ করে চলে, তেমনই কোনো বিচার-বিবেচনা না করে অন্যের দেখানো পথে চলাকেই গড্ডলিকা প্রবাহ বলা হয়।

‘সপ্তকাণ্ড রামায়ণ’ বাগধারার অর্থ ঘঃ বৃহৎ বিষয়।

রামায়ণ সাতটি কাণ্ডে (পর্বে) বিভক্ত একটি বিশাল মহাকাব্য। সেই কারণে, কোনো বড় বা বিস্তৃত বিষয় বোঝাতে এই বাগধারাটি ব্যবহার করা হয়।

শরতের শিশির বাগধারার অর্থ হলো সুসময়ের বন্ধু।

শরতের শিশির যেমন ক্ষণস্থায়ী এবং সকালের রোদে মিলিয়ে যায়, তেমনি সুসময়ের বন্ধুরা স্বার্থের কারণে কাছে আসে এবং খারাপ সময়ে দূরে চলে যায়। তাই এই বাগধারাটি সেইসব বন্ধুদের বোঝাতে ব্যবহৃত হয় যারা শুধু ভালো সময়েই পাশে থাকে।

'শিব রাত্রির সলতে' বলতে বুঝায়- পিতা মাতার এক মাত্র জীবিত সন্তান , এক মাত্র সন্তান, এক মাত্র অবলম্বন, একমাত্র বংশধর।

প্রদত্ত বিকল্পগুলির মধ্যে শিরে সংক্রান্তি হলো একটি বাগধারা।

• শিরে সংক্রান্তি বাগধারাটির অর্থ হলো: মহাবিপদ, আসন্ন বিপদ, ঘোর বিপদ বা মারাত্মক ঝামেলা।

অন্যান্য বিকল্পগুলো হলো উৎসব বা নির্দিষ্ট দিনের নাম:

• চৈত্র সংক্রান্তি: বাংলা বছরের শেষ দিন, যা একটি ঐতিহ্যবাহী উৎসব।
• পৌষ সংক্রান্তি: বাংলা পঞ্জিকার পৌষ মাসের শেষ দিন, যা মকর সংক্রান্তি নামেও পরিচিত এবং একটি উৎসব।
• শিব-সংক্রান্তি: এই নামে কোনো পরিচিত বাগধারা বা উৎসব নেই। সম্ভবত এটি অন্য কোনো শব্দবন্ধের ভুল রূপ।

‘ঢাকের কাঠি’ বাগধারার অর্থ হলো যে ব্যক্তি তোষামোদ করে বা মোসাহেবি করে।

'গাছপাথর' বাগধারাটির অর্থ হলো হিসাব-নিকাশ। যেমন, "সবকিছুতে এত গাছপাথর করলে তো চলে না।"

পাকা’ শব্দটি সাধারণত পক্ক, শুভ্র বা শুক্ল, স্থায়ী, নিপুণ, সম্পূর্ণ, খাঁটি ইত্যাদি হওয়া অর্থে ব্যবহৃত হয়। এখানে পক্ক অর্থ বোঝানো হচ্ছে 'পাকা আম' দ্বারা । অন্যদিকে পাকা বাড়ি বলতে ইটের তৈরি বাড়ি; পাকা রং বলতে স্থায়ী রং এবং পাকা কাজ বলতে নিপুণতার সাথে কৃতকাজকে বোঝানো হয়।

‘রামগরুড়ের ছানা’ কথাটির অর্থ হলো একজন মানুষ যিনি সব সময় বিরক্ত, দুঃখী এবং অসন্তুষ্ট থাকেন। এটি একটি সাধারণ বাগধারা যা কাউকে হাস্যকরভাবে বর্ণনা করতে ব্যবহার করা হয় যারা প্রায়শই আনন্দহীন এবং বিষণ্ণ।

‘নিরানব্বইয়ের ধাক্কা’ বাগধারাটির অর্থ টাকা জমানোর লোভ, অর্থাৎ সঞ্চয়ের প্রবৃত্তি। [সূত্র: বাংলা একাডেমী ব্যবহারিক বাংলা অভিধান] অন্য দিকে শিরে সংক্রান্তি বাগধারাটির অর্থ আসন্ন বিপদ।

‘ঢাকের কাঠি’ বাগধারাটির অর্থ হলো তোষামুদে, চাটুকার, মোসাহেব ইত্যাদি।

এই বাগধারাটি এমন ব্যক্তিকে বোঝাতে ব্যবহৃত হয়, যে নিজের স্বার্থসিদ্ধির জন্য বা কোনো প্রভাবশালী ব্যক্তির সুনজরে থাকার জন্য সর্বদা তার গুণগান করে, মিথ্যা প্রশংসা করে এবং কথায় কথায় হ্যাঁ মিলিয়ে চলে। তারা সাধারণত নিজেদের বিবেক বা বিচার-বুদ্ধি ব্যবহার না করে, অন্যের ইচ্ছাকেই প্রাধান্য দেয়।

‘ঠোঁট-কাটা’ শব্দের অর্থ কাউকে কোনো কিছু বলতে দ্বিধাবোধ করে না এমন, স্পষ্টবক্তা বা স্পষ্টবাদী। ‘পক্ষপাতদুষ্ট’ বলতে বোঝায় একচোখা বা এক পক্ষের প্রতি অনুরক্ত।

‘ব্যাঙের সর্দি’ একটি বাংলা বাগধারা। এর অর্থ হলো অসম্ভব ব্যাপার অথবা যা কখনো হয় না।

ব্যাঙের কখনো সর্দি হয় না, তাই এই বাগধারা দিয়ে এমন কিছু বোঝানো হয় যা একেবারেই অস্বাভাবিক বা হওয়ার কথা নয়।

"কাক ভূষণ্ডি" একটি বাংলা বাগধারা। এর একাধিক অর্থ রয়েছে, যা নিচে উল্লেখ করা হলো:

১. দীর্ঘজীবী ও অনেক অভিজ্ঞতাসম্পন্ন ব্যক্তি: কাককে দীর্ঘজীবী প্রাণী হিসেবে ধরা হয়। কাক ভূষণ্ডি বলতে এমন ব্যক্তিকে বোঝায় যিনি অনেকদিন ধরে বেঁচে আছেন এবং নানা অভিজ্ঞতা অর্জন করেছেন।
২. পুরাণোক্ত কাক: হিন্দু পুরাণ অনুযায়ী, কাক ভূষণ্ডি ছিলেন একজন কাক, যিনি ভগবান রামের ভক্ত ছিলেন এবং রামায়ণের সবকিছু জানতেন।
৩. সর্বজ্ঞ: এই বাগধারা দিয়ে এমন কাউকেও বোঝানো হয়, যিনি সবকিছু জানেন।
৪. অসম্ভব কিছু: এই বাগধারাটি অনেক সময় এমন কিছু বোঝাতেও ব্যবহৃত হয়, যা ঘটা সম্ভব নয়।

হঠাৎ কারো ভাগ্য সুপ্রসন্ন হলে তাকে ‘একাদশে বৃহস্পতি’ বলে।

অনিষ্টে ইষ্ট লাভ- শাপে বর। অরাজক দেশ – মগের মুল্লুক। সামান্য কিছু নিয়ে ঝগড়া লাগানো – ফুটো পয়সার লড়াই; চির অশান্তি- রাবণের চিতা।

ডাকাবুকা- নির্ভীক; তুলসী বনের বাঘ- ভণ্ড; তামার বিষ- অর্থের কুপ্রভাব; ঢাকের বাঁয়া- যার কোনো মূল্য নেই।

গোঁফ-খেজুরে বাগধারাটি একটি সমাসবদ্ধ শব্দ। এর ব্যাসবাক্য- গোঁফে খেজুর পড়ে থাকলেও খায় না যে। এটি মধ্যপদলোপী বহুব্রীহি সমাস। অত্যন্ত অলস ব্যক্তি বোঝাতে এটি ব্যবহৃত হয়।

অমাবস্যার চাঁদ (অদৃশ্য বস্তু), আকাশ কুসুম (অসম্ভব কল্পনা)। বক ধার্মিক (ভণ্ড), বিড়াল তপস্বী (ভণ্ড)। রুই-কাতলা (নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিবর্গ), কেউ কেটা (সামান্য), ভিজে বেড়াল (কপটচারী)। অর্থাৎ বক ধার্মিক ও বিড়াল তপস্বী শব্দযুগল সর্বাধিক সমার্থবাচক।

‘অর্ধচন্দ্র’ শব্দের অর্থ হলো:

আধাখানা চাঁদ।
গলা ধাক্কা।
* প্রহার করা।

তবে, অর্ধচন্দ্র শব্দটি সাধারণত একটি বাগধারা হিসেবে বেশি ব্যবহৃত হয়, যার অর্থ গলা ধাক্কা দেওয়া।

‘কারো পৌষমাস কারও সর্বনাশ’- কারও সুদিন কারও দুর্দিন। ‘চাল না চুলো, ঢেকী না কুলো’- নিতান্ত গরিব। ‘বোঝার উপর শাকের আঁটি’- অতিরিক্তের অতিরিক্ত।

'মাথা খাও' একটি বাগধারা এবং এর অর্থ হলো দিব্যি দেয়া বা শপথ করানো। কাউকে কোনো কাজ গুরুত্বের সাথে করতে বলার সময় বা জোর দেওয়ার জন্য এই অভিব্যক্তিটি ব্যবহার করা হয়। এর আক্ষরিক অর্থ না নিয়ে, এটি একটি আন্তরিক অনুরোধ বা প্রতিজ্ঞারূপে ধরা হয়।

অন্যান্য বিকল্পগুলো কেন সঠিক নয়:

• খঃ আস্কারা পাওয়া: এর অর্থ প্রশ্রয় বা উৎসাহ লাভ করা।
• গঃ জ্ঞান দেয়া: এর অর্থ উপদেশ বা শিক্ষা দেওয়া।
• ঘঃ অঙ্গ বিশেষ: এটি শরীরের একটি অংশকে বোঝায়, যা এই বাগধারার অর্থের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ নয়।

"তামার বিষ" কথাটির অর্থ হলো অর্থের কুপ্রভাব।

এটি একটি বাগধারা, যার মাধ্যমে বোঝানো হয় যে, টাকা বা ধন-সম্পদ অনেক সময় মানুষের জন্য ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। অর্থের প্রভাবে মানুষ বিভিন্ন খারাপ কাজে লিপ্ত হতে পারে, যেমন- দুর্নীতি, অহংকার, লোভ ইত্যাদি।

হাত গুটান শব্দের অর্থ কোন কাজ শেষ করা বা সমাপ্তি করা।

এখানে ঘঃ সাপে নেউলে বাগধারাটি ভিন্নার্থক।

অন্য তিনটি বাগধারা - সুখের পায়রা, লক্ষ্মীর বরযাত্রী এবং শরতের শিশির - মূলত ক্ষণস্থায়ী সুখ বা প্রাচুর্য অথবা অপ্রত্যাশিত আগন্তুক বোঝাতে ব্যবহৃত হয়। এদের মধ্যে একটি ক্ষণস্থায়ী বা অনিশ্চিত ভালো অবস্থাকে ইঙ্গিত করে।

অন্যদিকে, সাপে নেউলে বাগধারাটি তীব্র শত্রুতা বা ঘোর বিরোধ বোঝাতে ব্যবহৃত হয়। এটি সম্পূর্ণ ভিন্ন একটি অর্থ বহন করে।

'আট কপালে' একটি বাংলা বাগধারা। এর অর্থ হলো হতভাগ্য বা দুর্ভাগ্যবান।

এই বাগধারাটি সেইসব ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয় যাদের ভাগ্য খারাপ বলে মনে করা হয়, যারা কোনো কাজে সহজে সফলতা লাভ করতে পারে না অথবা যাদের জীবনে প্রায়শই খারাপ ঘটনা ঘটে।

'চাঁদের হাট' কথাটির অর্থ কঃ আনন্দের প্রাচুর্য।

চাঁদের হাট বলতে এমন একটি মিলনমেলা বা সমাবেশ বোঝায় যেখানে অনেক আনন্দ ও সুখ বিদ্যমান। এটি সাধারণত বন্ধু-বান্ধব বা প্রিয়জনদের একত্র হওয়া এবং আনন্দময় সময় কাটানোকে ইঙ্গিত করে।

অন্যান্য বিকল্পগুলোর অর্থ:

⇒ খঃ কচিকাঁচার মেলা: ছোট ছেলেমেয়েদের ভিড় বা মেলা।
⇒ গঃ পূর্ণিমা রাত: পূর্ণ চাঁদের আলোকিত রাত।
⇒ ঘঃ জ্যোৎস্না: চাঁদের আলো।

'জিলাপির প্যাচ' বাগধারার অর্থ কুটিল বুদ্ধি বা কুটিলতা।

'তাসের ঘর' বাগধারাটির অর্থ হলো ক্ষণস্থায়ী বস্তু বা সহজে ভেঙে যায় এমন জিনিস।

যেমন, "তাদের সম্পর্কটা তাসের ঘরের মতো ভেঙে গেল।"

'আমড়াগাছি করা' একটি বাগধারা, যা দিয়ে তোষামোদ করা, তেল দেওয়া, বা খোশামোদ করা বোঝানো হয়। সহজ কথায়, কোনো স্বার্থ সিদ্ধির উদ্দেশ্যে বা কাউকে খুশি করার জন্য অতিরিক্ত প্রশংসা করা বা মিথ্যা স্তুতি করার অর্থেই এটি ব্যবহৃত হয়।

উদাহরণস্বরূপ: "বসকে খুশি করার জন্য সে সব সময় আমড়াগাছি করে।"

'সর্বনাশ' অর্থে যথোপযুক্ত বাগধারাটি হলো ভরাডুবি।

এছাড়াও, কিছু ক্ষেত্রে সর্বস্বান্ত হওয়া বা উড়ে যাওয়া (যেমন: সব উড়ে যাওয়া) বাগধারাগুলোও 'সর্বনাশ' অর্থে ব্যবহৃত হতে পারে, তবে ভরাডুবি শব্দটিই সবচেয়ে বেশি প্রযোজ্য।

'নদের চাঁদ' বাগধারাটির অর্থ হলো অত্যন্ত সুদর্শন কিন্তু অকর্মণ্য ব্যক্তি।

'যার কোনো মূল্য নেই' এর সমার্থক বাগধারা হলো:

• ঢাকের কাঠি
• মাথার ঘাম পায়ে ফেলা
• কানে তুলো দেওয়া
• ঠোঁট কাটা
• ঢাকের বায়া

‘পত্রপাঠ’ বাগধারাটির অর্থ হলো অবিলম্বে বা তৎক্ষণাৎ।

এটি সাধারণত কোনো কাজ সঙ্গে সঙ্গে বা কোনো ধরনের বিলম্ব না করে করার ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়। উদাহরণ:

চিঠিটা পড়া মাত্রই সে পত্রপাঠ রওনা দিল।