প্রশ্নঃ বাংলা ভাষায় কয়টি তৎসম উপসর্গ রয়েছে?
[ প্রা.বি.স.শি. 29-03-2024 ]
বাংলা ভাষায় ২১টি তৎসম উপসর্গ রয়েছে। তৎসম উপসর্গ মূলত সংস্কৃত ভাষা থেকে এসেছে এবং এগুলো বাংলা ভাষায় অপরিবর্তিতভাবে ব্যবহৃত হয়।
তৎসম উপসর্গের তালিকা:
১. অ- (অশুভ)
2. অতিঃ (অতিবৃদ্ধি)
3. অধিঃ (অধিকরণ)
4. অনু- (অনুকরণ)
5. অপ- (অপরাধ)
6. অভি- (অভিযান)
7. অধঃ- (অধঃপতন)
8. আ- (আবেদন)
9. উৎ- (উৎপাদন)
10. উপ- (উপনয়ন)
11. নির্- (নির্মাণ)
12. নিস্- (নিস্ক্রিয়)
13. দুর্- (দুর্বুদ্ধি)
14. দুঃ- (দুঃখ)
15. পরা- (পরাক্রম)
16. পরি- (পরিবর্তন)
17. প্র- (প্রকাশ)
18. প্রতি- (প্রতিযোগিতা)
19. বি- (বিজ্ঞ)
20. সম্- (সম্পর্ক)
21. সু- (সুশীল)
এই উপসর্গগুলো বাংলা ভাষায় নতুন শব্দ গঠনের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
প্রশ্নঃ "নিমরাজি" শব্দে "নিম" কোন উপসর্গ?
[ প্রা.বি.স.শি. 02-02-2024 ]
"নিমরাজি" শব্দে "নিম" একটি বিদেশি উপসর্গ।
"নিম" উপসর্গটি ফার্সি ভাষা থেকে বাংলা ভাষায় এসেছে। এর অর্থ হলো 'অর্ধেক' বা 'কিছুটা'।
বাংলা ভাষায় ব্যবহৃত বিদেশি উপসর্গগুলোর মধ্যে আরবি, ফার্সি ও ইংরেজি উল্লেখযোগ্য। "নিম" ফার্সি উপসর্গ হওয়ায় এটি বিদেশি উপসর্গের অন্তর্ভুক্ত।
প্রশ্নঃ উপসর্গের কাজ কি?
[ প্রা.বি.স.শি. 02-02-2024 ]
উপসর্গের প্রধান কাজ হলো শব্দের অর্থ পরিবর্তন করা অথবা নতুন অর্থ তৈরি করা। এর বাইরেও উপসর্গ আরও কিছু কাজ করে থাকে:
১. অর্থের পরিবর্তন:
- ইতিবাচক থেকে নেতিবাচক:
- জয় > পরাজয় (বিপরীত অর্থ)
- সুন্দর > কুসুন্দর (নিন্দার্থে)
- রাজি > অরাজি (অস্বীকৃতি)
- অর্থের তীব্রতা বৃদ্ধি:
- তাপ > প্রতাপ (অধিক তাপ)
- বল > প্রবল (অধিক শক্তি)
- গতি > অতিগতি (অত্যধিক গতি)
- অর্থের সংকোচন:
- আহার > উপবাস (অল্প আহার)
- কুল > উপকূল (কূলের কাছে)
- অর্থের সম্প্রসারণ:
- পথ > পরিপথ (চারদিকের পথ)
- ভ্রমণ > পরিভ্রমণ (চারদিকে ঘোরা)
- নতুন অর্থ সৃষ্টি:
- হার > আহার (খাবার)
- হার > উপহার (ভেঁট)
- হার > বিহার (ভ্রমণ)
- হার > সংহার (ধ্বংস)
২. শব্দের শ্রেণি পরিবর্তন না করা:
উপসর্গ যুক্ত হয়ে নতুন শব্দ তৈরি করলেও সাধারণত মূল শব্দের শ্রেণি অপরিবর্তিত থাকে। যেমন:
- বিশেষণ: কাল > অকাল
- বিশেষ্য: দেশ > বিদেশ
- ক্রিয়া: করা > উৎকর্ষ
তবে কিছু ক্ষেত্রে সামান্য অর্থের ভিন্নতা দেখা যেতে পারে, কিন্তু মৌলিক শ্রেণি সাধারণত একই থাকে।
প্রশ্নঃ "পরাজয়ের " - শব্দটিতে কোনটি উপসর্গ?
[ প্রা.বি.স.শি. 27-06-2019 ]
"পরাজয়ের" শব্দটিতে "পরা" উপসর্গ হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে।
এখানে, "পরা" উপসর্গটি "জয়" শব্দের আগে বসে একটি নতুন শব্দ "পরাজয়" তৈরি করেছে। "পরা" উপসর্গটি বিপরীত বা পরাজয় অর্থে ব্যবহৃত হয়। তাই, "পরাজয়" শব্দের অর্থ হলো হেরে যাওয়া বা পরাজিত হওয়া।
প্রশ্নঃ 'অপমান' শব্দের 'অপ' উপসর্গটি কোন অর্থে ব্যবহৃত?
[ প্রা.বি.স.শি. 26-06-2019 ]
'অপমান' শব্দের 'অপ' উপসর্গটি বিপরীত অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে।
'অপ' উপসর্গটি বাংলা ভাষায় সাধারণত নিম্নলিখিত অর্থগুলোতে ব্যবহৃত হয়:
⇒ বিপরীত: যেমন - যশ (খ্যাতি) - অপযশ (বদনাম), কার (করা) - অপকার (ক্ষতি), মান (সম্মান) - অপমান (অসম্মান)।
⇒ অভাব: যেমন - রাধ (সিদ্ধ করা) - অপক্ক (অসিদ্ধ)।
⇒ নিকৃষ্ট: যেমন - কথা (বলা) - অপকথা (খারাপ কথা)।
⇒ দূষণ: যেমন - জল - অপজল (দূষিত জল)।
'অপমান' শব্দটিতে 'অপ' যুক্ত হয়ে 'মান' (সম্মান) শব্দের বিপরীত অর্থ 'অসম্মান' বা 'অবজ্ঞা' প্রকাশ করছে।
প্রশ্নঃ 'অঘারাম বাস করে অজপাড়া গায়ে' 'অঘা' ও 'অজ' কোন ধরনের উপসর্গ?
[ প্রা.বি.স.শি. 31-05-2019 ]
'অঘারাম বাস করে অজপাড়া গায়ে' বাক্যটিতে 'অঘা' এবং 'অজ' উভয়ই বাংলা উপসর্গ।
- অঘা: এটি একটি বাংলা উপসর্গ যা খারাপ বা মন্দ অর্থে ব্যবহৃত হয়। যেমন: অঘারাম (মন্দ বা নির্বোধ রাম), অঘাচণ্ডী।
- অজ: এটিও একটি বাংলা উপসর্গ যা অভাব বা না-বাচক অর্থে ব্যবহৃত হয়। যেমন: অজপাড়া (যে পাড়ায় সহজে যাওয়া যায় না বা যেখানে কোনো পরিচিতি নেই), অজমূর্খ।